কর্কট রোগের হদিস

ব্লাড ক্যান্সার, মারণ রোগ ক্যান্সারের প্রকারভেদের মধ্যে অন্যতম বিপজ্জনক রোগটি হলো ব্লাড ক্যান্সার| ক্যানসারের অন্যান্য প্রকারভেদগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা গেলেও ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ধারণ বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়| এই রোগ যেহেতু নির্ধারণ করাই কষ্টকর তাই এই রোগের যথাযথ ওষুধও বাজারে পাওয়া যায় না| ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষ তাই তার রোগ চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেনে যান এমন এক রোগের কবলে সে পড়েছে যেখান থেকে তার মুক্তি নেই|

ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শরীরে পূর্ণাঙ্গ রক্তকোশের সংখ্যা হঠাৎ খুব বেড়ে যায়| এই রোগের বিজ্ঞানসম্মত নাম মায়লো প্রলিফেরেটিভ ডিজিজ’| এই রোগের ফলে রক্তকোষ শরীরের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে| দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে ছয়টি এইভাবে মিউটেশনের ফলে রক্তে এই কোষের সংখ্যা মাত্রা ছাড়া হয়ে পড়ে| রক্তের মধ্যে এই কোষের সংখ্যা এইহারে বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে এই কোষগুলি ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হয়| অস্বাভাবিক দ্রুত হারে সেই ক্যান্সার কোষেরও বৃদ্ধি ঘটতে থাকে| আর সেই ক্যান্সার কোষগুলি রক্তপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে| আর এই সম্পূর্ণ ঘটনার জন্য দায়ী হলো একটি প্রোটিন যার নাম পি-৫৩|

মানবদেহের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার পিছনে দায়ী থাকে মূলত কোনো না কোনো প্রোটিন| বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ হাজার প্রোটিনের হদিস মিলেছে| প্রতি প্রোটিন একাধিক কাজের জন্য নিজেদের নাম লিখিয়েছে| সেই জন্যই একটি প্রোটিন যদি একটি কাজের জন্য উপকারী হয় সে যে অপর সকল কাজের জন্যেও উপকারী হবে তা কিন্তু নয়| সে সেই ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাবও ফেলতে পারে| এই পি-৫৩ প্রোটিনটি মানবদেহের রক্তস্রোতের মধ্যে কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে থাকে|

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর একদল গবেষক নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে একটি নতুন প্রোটিন কণা আবিষ্কার করেছেন| তার নাম দেওয়া হয়েছে আস্রিজ’| জানা গেছে, এই নতুন প্রোটিনটি মানবশরীরেই বর্তমান থাকে| যেসব ক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে যায় তাদের শরীরে যদি আস্রিজ প্রোটিনের ঘাটতি থেকে থাকে তবে ক্যান্সার হওয়া অনিবার্য| এই গবেষনার মূল গবেষক সালোনি সিনহা জানিয়েছেন, পি-৫৩ এর মিউটেশন ছাড়াও কিভাবে ক্যান্সার হয় এটাই ছিল তাদের গবেষণার মূল বস্তু| এছাড়াও কেন আস্রিজ প্রোটিনের অভাবে পি-৫৩ কার্যকারিতা হারায় তা দেখাই ছিল এই গবেষনার মূল লক্ষ্য| পি-৫৩ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই রক্তের স্টেম সেল অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে| এই স্টেম সেল বৃদ্ধি পেতে পেতে অবশেষে তা ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়|

বহুদিনের গবেষনার পর অবশেষে একটি নতুন প্রোটিন আবিষ্কার| আর এই নতুন প্রোটিনই যে ক্যান্সার রোগ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দরজা খুলে দিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, জানালেন মূল গবেষক সালোনি|         

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...