প্রচন্ড গরমে খাবার খেতে চাইছে না বাড়ির ছানাপোনারা। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে নিতে পারে পরিবারের অন্য সদস্যবৃন্দ? নিশ্চই নয়। প্রথম প্রথম বাবা-বাছা করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও পরে নানারকম খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বানিয়ে চেষ্টা করা হয় কিভাবে তাদের খাওয়ানো যায়। এই গরমে এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি বাড়ির ছবি। খাবারের থালা হাতে সন্তানের পিছনে ছুটতে ছুটতে গলদঘর্ম দশা মায়ের। কিভাবে আদরের সন্তানেরা একটু খেতে পারবে, কোন ধরণের খাবার খেলে সন্তানের মুখে হাসি ফুটবে এই নিয়ে সদাই চিন্তিত মায়েরা।
সেরকমই একটি পরিবার হলো আলিপুর চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় থাকা প্রতিটি প্রাণীই হলো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সন্তানসম। কখনো তাদের যত্নআত্তির কোনো ত্রুটি রাখেননা তারা। কিন্তু সমস্যা বেড়েছে অত্যধিক গরমের কারণে। পরিবারের বড় শিশু অর্থাৎ বাঘ এবং সিংহের মতো প্রাণী যাদের মূল খাবার কাঁচা মাংস তারাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মাংসের থেকে। অত্যধিক গরমে মাংস খেলে যে শরীর খারাপ করবে বোঝে তারাও। তাই গরম পড়ার সাথে সাথেই তাদের মুখে এসেছে অরুচি। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। প্রতিবছর গরমে এই এক দৃশ্যের দেখা মেলে সব চিড়িয়াখানাতে। ছানাপোনাদের মনের মতন খাবারের যোগান আর এই গরমে তাদের শরীর সুস্থ রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ কর্তৃপক্ষের।
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা জানালেন, শহরে ফনী ঝড়ের আগমনের পর থেকেই গরম বেড়েছে তীব্রভাবে। আর তার পর থেকেই অসুস্থ বোধ করতে থাকে চিড়িয়াখানার প্রাণীরা। সেই সময়েই তাদের ডায়েট চেঞ্জ করার কথা মাথায় আসে তাদের। এর সাথে সাথে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে পাখি থেকে শুরু করে সমস্ত প্রাণীদের স্নানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।এরপরই সারাদিনব্যাপী তাদের দেওয়া হচ্ছে ওআরএস-এর জল। চিড়িয়াখানার বাসিন্দারা গরমে যাতে ডিহাইড্রেট না হয়ে পরে তাই এই ব্যবস্থা। এই গরমে পরিবর্তন ঘটেছে ভাল্লুকের ডায়েটেও। ফল মূল ঘাস পাতার পরিবর্তে তাদের দেওয়া হচ্ছে দই আর ভাত। শিম্পাঞ্জীবাবুও পিছিয়ে নেই তার জন্য আনা হচ্ছে বিশেষ লস্যি| এছাড়াও চিড়িয়াখানার অন্যান্য পাখিদের জন্য দানার পরিবর্তে বেশি করে ফল দেওয়া হচ্ছে। বাঘ সিংহ এই সময় বেশি মাংস খেতে চাইছে না। তাই তাদের জন্য বরাদ্দ ৮ কিলো মাংসের থেকে ২ কিলো মাংস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খাওয়াদাওয়ার পরিবর্তনের পাশাপাশি অতিরিক্ত তাপের প্রভাবে যাতে কোনো প্রাণী অসুস্থ হয়ে না পড়ে তার দিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা প্রাণীদের উপর কড়া দৃষ্টি দিয়ে রাখেন। কোনো প্রাণী গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে দেখলেই তাদের প্রয়োজনমতো চিকিৎসা করছেন তারা। বাঘ, সিংহ, জিরাফ প্রভৃতি প্রাণীর ঘরে পাখাও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাতিদের জন্য বিশেষ স্নানের জায়গার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে যাতে তাদের প্রয়োজনমতো তারা নিজেদের গা ভিজিয়ে নিয়ে পারে। ক্যাঙ্গারুদের ঘর ঘিরে ফেলা হয়েছে খসখস দিয়ে। বেলার দিকে রোদ না পড়া পর্যন্ত বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না কোনো প্রাণীকে।
প্রচন্ড গরমে প্রাণীদের রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। মানুষই এতো ভুগছেন এই গরমে তাহলে অবলা প্রাণীরা কতটা কষ্ট পাচ্ছে এই অসহ্য গরমে তা বলাই বাহুল্য। এই পরিস্থিতিতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়।