জে কে রাওলিং আর নেত্রপ্রসাদ শর্মা| এক বছর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না, এমনকি দুজনে দুজনের নামও শোনেননি| রাওলিং-ও কোনদিন ভারতে আসেননি আর নেত্রপ্রসাদ পা রাখেননি ব্রিটেনে | তা সত্ত্বেও একজন অজানা মানুষের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে এই বিশ্ববিখ্যাত লেখিকার কলমে| বক্সা টাইগার রিসার্ভ-এর এক অখ্যাত গাইডকে নিয়ে তিনি তাঁর সাম্প্রতিক দুশো বাহাত্তর পাতার একটি আস্ত অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লিখে ফেলেছেন| চাক্ষুস আলাপ না হলেও নেত্রপ্রসাদের অদ্ভুত ক্ষমতা এতটাই অভিভূত করেছিল রাওলিংকে যে তিনি ‘দ্য হোয়াটস লেফট অফ দ্য জাঙ্গল বুক’ নামক উপন্যাসের নায়ককে গড়ে তুলেছেন নেত্রপ্রসাদের আদলে| অর্থাৎ হ্যারি পটার নয় রক্তমাংসে গড়া বাস্তবের এক মানুষই ব্রিটিশ লেখিকার গল্পের মূল চরিত্র|
মাঝবয়সী নেত্রপ্রসাদ পেটের দায়ে ২৪ বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে গাইড -এর জীবিকা বেছে নিয়েছিল| অনামী পাম্পু বস্তির সদ্য কৈশোর পেরোনো ছেলেটার ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে জঙ্গল| একটু একটু করে হাতের তালুর মত জঙ্গল ও তার বাসিন্দাদের চিনে ফেলতে শুরু করে সে| জঙ্গলের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সখ্যতা এতটাই যে চোখ বন্ধ করেই হদিস দিতে পারেন হাতি, বাইসন, চিতাবাঘ অথবা ঢোলের উপস্থিতি, গড়গড় করে বলে দিতেন পারেন কোনটা কি ফুল, প্রজাপতি ,অর্কিড এমনকি নাম না জানা ফুলের নামও| বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারেন বন্য প্রাণীর উপস্থিতি| পর্যটকদের জঙ্গল চেনানোই যে তার পেশা ও নেশা|পেশার তাগিদে শিখেছেন বাংলা ও গোর্খা ভাষা| কাজ চালানোর মত ইংরেজি বলতে পারেন মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোনো নেত্রপ্রসাদ| তাই বিদেশী পর্যটক এলে খোঁজ পরে তাঁর|
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় গবেষণারত ছ’জন ছাত্রছাত্রীর একটি দলের জন্য গাইড হিসেবে জঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছিলেন এক বছর আগে| সেখানেই আলাপ জমে ওঠে, এক অন্য নেত্রপ্রসাদকে আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রছাত্রীরা| নেত্রপ্রসাদের এক ঘন্টার একটি ইন্টারভিউ নেয় এক ছাত্রী| আর পাঁচটা জিনিসের মত এই পর্বটাও ভুলতে বসেছিল সে| কিন্তু হঠাৎ একদিন ওই মার্কিনী ছাত্রীর ফোন পান নেত্র|
কিন্তু এখানেই চমকের শেষ নয়| কয়েক হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ফোনের অপর প্রান্তে অপেক্ষা করছিলেন স্বয়ং লেখিকা জে কে রাওলিং| দুজনের পরিচয়পর্ব চুকলে সমস্ত ঘটনা নেত্র্প্রসাদ কে খুলে বলেন লেখিকা| ১ ঘন্টা কথা হয় দুজনের| দিনকয়েক আগেই কয়েক দিন আগে রাওলিং এর এই উপন্যাসের খসড়া তাঁকে মেইল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে| সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুলাইতে লেখিকার সঙ্গে সামনাসামনি আলাপের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে উড়ে যাবেন গল্পের নায়ক| সেখানেই উপন্যাসের ফাইনাল টাচ পর্ব|