লালমাটির শান্তিনিকেতন। কাঁকর- পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছে এক সাইকেল। মাঝে মাঝেই ঘণ্টি বেজে উঠছে ক্রিং-ক্রিং।
অ্যাটলাস সাইকেলের সামনে বেতের ঝুড়ি। প্যাডেলে চাপ পড়তেই তরতরিয়ে ছুটছে যান। গন্তব্য বোলপুরের আশেপাশের সাঁওতাল গ্রাম। কেমন আছে সেখানের শিশুরা জানতেই সাইকেল ছুটিয়ে চলেছেন এক মাস্টারমশাই।
তাঁর ছাত্রছাত্রীরা কেউ রাজী নয় গ্রামে ঘুরে-ঘুরে ‘ফিল্ড-ওয়ার্ক’ করতে অগত্যা মাস্টারমশাইকেই নামতে হল পথে ।
সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশে শিশু কন্যা এবং শিশুপুত্রদের মধ্যে বৈষম্য ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়।
সাইকেল নিয়ে তাঁর এই গ্রাম ঘুরে দেখার ছবি চেনা হয়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীদের কাছেও।
সালটা ১৯৯৮। শান্তিনিকেতনের কাঁকুরে পথে রোদ-জল-ঝড় মেখে ঘুরে বেড়ানো সেই মাস্টারমশাইয়ের মেধার কাছে বশ মেনেছিল সারা বিশ্ব। অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন ট্রিনিটি কলেজের বিশিষ্ট অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। শুরুর দিকে তাঁর এক সহকারী গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাচ্চাদের ওজন মাপত। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি সেই কাজ আর করতে রাজী হননি। ছাত্রছাত্রীরাও নারাজ। তা’বলে কি থেমে থাকবেন! অগত্যা সাইকেল নিয়ে সমীক্ষার কাজ তিনিই মাঠে। আর সঙ্গী সাইকেল।
তাঁর এই পুরনো সহচরটি বহুদিন পর্যন্ত সঙ্গ দিয়েছে তাঁর। শান্তিনিকেতনে এলেই বেরিয়ে পড়তেন সাইকেল নিয়ে।
পরবর্তী সময়ে সেই সাইকেল স্থান পেয়েছে নোবেল কমিটির মিউজিয়ামে। সম্প্রতি নোবেল কমিটি সেই সাইকেলের ছবি দিয়ে একটি টুইটও করে। সোশ্যাল মিডিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে অমর্ত্য সেনের সাইকেল বৃত্তান্ত সামনে আসার পর।
;