যৌথ বাহিনী গড়া হল দূষণ রুখতে

পুজো কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিওয়ালির পর কলকাতার বাতাস প্রচন্ড দূষিত হয়ে পড়ে। গতবারে দিল্লির দূষণ খবরের শিরোনামে ছিল, কিন্তু তার তুলনায় এ বছর কলকাতার দূষণ যথেষ্ট বেশি পরিমানে হয়েছিল। শীত পড়ে গেছে। এখন চারদিকে আগুন পোহানোর জন্য মানুষ বিভিন্ন রকম জিনিস পোড়ান। তার মধ্যে গাছের ডালপালা, কাঠ, জঞ্জাল যেমন থাকে, তেমনি থাকে সাইকেলের টায়ারও। ফলে যথেষ্ট পরিমানে বায়ু দূষণ হয়। তাই রোজ সন্ধ্যে থেকে রাত অব্দি গোটা কলকাতা ঘুরে জঞ্জাল পোড়ানো বন্ধ করে বায়ু দূষণ রুখতে যৌথ বাহিনী গড়ছে রাজ্য সরকার। কলকাতা পুলিশের অফিসার ও কর্মী এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে এরকম কয়েকটি দল গড়তে উদ্যোগী হয়েছে পরিবেশ দফতর। রাজ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুমাস টানা পুলিশ, পর্ষদ ও পরিবেশ দফতরের অফিসারদের নিয়ে গড়া দলগুলি সূর্য ডোবার পর থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখবে কোথায় কোথায় এমনটা হচ্ছে। প্রথমে এই ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন করা হবে। বোঝানো হবে এর ক্ষতি কতটা, বার বার বোঝানো সত্ত্বেও যাঁরা প্রচারে আমল দেবেননা, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে পুলিশ ও পর্ষদ।

       পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি দুভাবে পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একটি বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরটি শহর জুড়ে নির্মাণ কাজ জনিত ধুলো যাতে না ছড়ায়, সেদিকে নজর দেওয়া। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেই সংক্রান্ত একটি বিশেষ বৈঠক করবে রাজ্য পরিবেশ দফতর। সেখানে মেট্রো, পূর্ত দফতর, এইচআরবিসি ও বিভিন্ন বেসরকারি নির্মাণসংস্থার সঙ্গে বৈঠক করার কথা। কলকাতার বাতাসে বিষ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কোন উৎস কতটা দায়ী তার একটা সমীক্ষা করেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদনিরি ( ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট)। যৌথভাবে করা সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে, নিরি তার প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কলকাতার বাতাস বিষিয়ে তোলার পেছনে নির্মাণস্থল থেকে ছড়িয়ে পড়া ধুলো ও জঞ্জাল পোড়ানোর অবদান অনেকটাই। পরিবেশ দফতরের বক্তব্য, রাজ্য সরকারি এবং কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলি নির্মাণের ধুলো ছড়ানো বন্ধে তেমন তৎপর নয়। নির্মাণকার্যে ধুলো ছড়ানো বন্ধে কি কি করণীয়, সেই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে। কিন্তু মুম্বই-এর একটি সংস্থা ছাড়া কেউই সেই নির্দেশিকা মেনে কাজ করেনা। তাই তাদের মত করেই অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ধুলো আটকাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। এ ছাড়াও রান্নার জন্য বিশেষ করে রুটি সেঁকা, কাবাব তৈরী এবং জমাকাপড় ইস্ত্রির দোকানে কয়লাকাঠকয়লার উনুন ব্যবহারও এই রকম বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। তবে পরিবেশ দফতরের এক কর্তার মতে, প্রান্তিক মানুষদের রুজি রোজগার এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাই সেই ব্যাপারটি একটু বিবেচনা করে দেখতে হবে। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...