৫৫০ বছরের এক মমির খোঁজে

হিমাচল প্রদেশ এ প্রকৃতি যেন আপন প্রেমে পাগল পারা। উপত্যকা, পাহাড়, পর্বত, নদী ও ঝর্ণায় মিলেমিশে যেন আত্মহারা কোনও শিল্পীর ক্যানভাস। প্রকৃতির রূপ বিভোর হয়ে ঈশ্বর যখন নিজের পুরোটা দিয়ে সুন্দর করে সাজান কোনও পার্থিব সৃষ্টিকে। সেই সৃষ্টিও আদপেই হয়ে ওঠে ঐশ্বরিক। গিউ। রাজ্যটির মানচিত্রের প্রায় জনশূন্য এক গ্রাম। ফি বছরে হিমাচলের টানে তাঁর মাটিতে পা ছোয়ান বহু দেশী ও বিদেশী। ঘোরার তালিকায় সাইট সিয়িং এর দৃশ্যপটে বহু জায়গার নাম সংযোজন হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে কিছু চেনা তো কিছু জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

এরকম জনপ্রিয়তা কুরোবার তালিকায় যে জায়গাটার নাম সবচেয়ে আগে উঠে আসে, তা হল এই গ্রাম। চোখে গুনতে পারার মত জনসংখ্যা। বাইশ নং জাতীয় সড়ক ঘেঁষে নাকো থেকে কাজা যাওয়ার পথে ডান দিকে ঘুরে ১২ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। পাহাড়ি পাথুরে পথ। ভারত - তিব্বত সীমান্তে, সমুদ্র থেকে দশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করছে স্পিতি জেলার এই গ্রাম। প্রশ্ন উঠছে তো যে কীভাবে বৃদ্ধি পেলো এর জনপ্রিয়তা। উত্তর হচ্ছে এক মমি। এক বৌদ্ধ লামার মমি। কী অবাক বিস্ফোরণ হচ্ছে তো! আরও বলা ভালো এই মমি কোনও জাদুঘরে সাজানো মমি নয়। আমদানি হয়নি বিদেশ থেকেও। তবে...

সাংঘা তেনজিং। ঘটনা আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর আগের। কেউ বলেন অনশনে প্রাণত্যাগ করেন এই লামা। বৌদ্ধধর্মে টানা উপবাসের মধ্য দিয়ে উপাসনা একটি পরিচিত ধর্মাচার। অনশনে থাকাকালীন একসময় ত্যাগ করেন জীব দেহ। আবার কারও মতে ঘটনা অন্য। উনি ধ্যানমগ্ন ছিলেন। সেই সময় এলো ভূমি ধ্বস। তাঁর প্রভাবেই নাকি মৃত্যু। তারপর সেই দেহ কালক্রমে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে মমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এর জন্য কোনও রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হয়নি। দেহে কোনও পচনও হয়নি। মমির দাঁত ও মাথার চুল আছে অশেষ এখনও। লোকে বলে, মমির চুল নাকি বাড়ে। বিচার হয়নি যদিও এই তত্ত্বের যৌক্তিকতা।

১৯৭৫ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো পুরো গ্রাম। ইন্দো-টিবেটান সীমান্ত বাহিনী কাজে নামলো পুনরুদ্ধারের। গ্রামের এদিক সেদিক জুড়ে ছড়িয়ে আছে আটটা স্তুপে। এগুলির মধ্যে একটাতেই উদ্ধার করা হয় এই মধ্যযুগীয় মমিটিকে। পাহাড় চূড়ায় এক নতুন গুম্ফা বানিয়ে তার মধ্যে কাচের বাক্সে ইদানিং সজ্জিত মমিটি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলে, এই অঞ্চলটির প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও পরিবেশ এর দরুণ একমাত্র সম্ভব হয়েছে সেই লামার মমিকরণ। আর যখন তাঁর যোগাযোগ স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গে তাই তাঁকে হেলায় নেওয়া যায়না।

গ্রামের লোকেদের আজ প্রধান উপাসক দেবতা এই মমির বেশে লামা। স্থানীয় প্রশাসন কে অনুরোধ করা হয় হয়েছে এক মন্দির নির্মাণের জন্য। নতুবা ধীরে ধীরে ক্ষয়ের মুখে চলে যাচ্ছে এই মমি। এদিকে দূষণ বাবাজির দাপটও যে বাড়ছে। এরপর হিমাচলের দিকে পা বাড়ানো মানেই, একবারটি হয়ে আসা গিউ - র পথে, ছুঁয়ে আসা প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্ট সেই অদ্ভুত মমিকে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...