সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ও স্বামী আত্মস্থানন্দ, গুরু শিষ্যের এক অনন্য উপাখ্যান

আজ শিক্ষক দিবস। তাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বাবা-মা। আমাদের আঁধার থেকে আলোতে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করেন তাঁরাই। ভারতের অন্যতম এক শিক্ষক তথা স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনটিকে 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করা হয় এদেশে। ১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। জীবনের প্রথম দিকে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন। পরে কিছুদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। ১৯২১ সাল, তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তিনিই সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়জিত করেন।
 
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অধ্যাপনার জন্যে আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ তাঁকে নাইটহুড সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৫৪ সালে ভারতরত্নে সম্মানিত হন। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর জন্মদিন পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করে। তিনি জানান তাঁর জন্মদিন পালনের পরিবর্তে ওই দিনটিকে 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করলে তিনি খুশি হবেন। সেই ১৯৬২ সালেই ভারতে প্রথম বারের জন্য 'শিক্ষক দিবস'পালিত হয়। তারপর থেকেই ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটি 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
 
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ও স্বামী আত্মস্থানন্দ মহারাজের মধ্যে ছিল গুরু শিষ্যের সম্পর্ক। ​রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পূর্ববর্তী অধক্ষ্য ছিলেন স্বামী আত্মস্থানন্দ মহারাজ। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল সত্যকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। মঠ ও মিশনের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় এক চরিত্র। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল প্রশ্নতীত। সেই সঙ্গে সেবা অর্থাৎ শিব জ্ঞানে জীব সেবাকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন তিনিই। এই সত্যকৃষ্ণ ছিলেন দর্শনের ছাত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তখন তাঁর অধ্যাপক ছিলেন শ্রী সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরের পাঠ নিতে নিতে কেদার বাবার হাতে সন্ন্যাসের পথ বেছে নেন সত্যকৃষ্ণ। ঠাকুর-মা-স্বামীজীকে গুরু মেনে শুরু হয় আত্মস্থানন্দের জীবন।
 
বহুদিন পর সন্ন্যাসী হয়ে সত্যকৃষ্ণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তাঁর অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা করতে। বসে ছিলেন শিক্ষক, কিন্তু তাঁকে দেখামাত্রই উঠে দাঁড়ান সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। সত্যকৃষ্ণ বললেন, আপনি হয়ত আমায় চিনতে পারেননি, আমি আপনার ছাত্র ছিলাম। উত্তরে শিক্ষক বলেন, যখন তুমি আমার ছাত্র ছিলে তখন আমি ছিলাম তোমার শিক্ষক। কিন্তু আজ তুমি আর আমার ছাত্র নও, তুমি হলে জগৎ গুরু।
 
এটাই সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, এখানেই তিনি অনন্য, অন্যদের তুলনায় স্বতন্ত্র। রাজনীতি, খ্যাতি, প্রভাব সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে তিনি আদর্শ শিক্ষকের এক অনন্য নজির হয়ে থেকে গিয়েছে।
 
(তথ্যসূত্র: আত্মস্থানন্দজী মহারাজের এক সাক্ষ্যাৎকার)
 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...