বিজ্ঞান নিয়ে বরাবরই সাধারণ মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে| পদার্থ বিজ্ঞানের বোসন কণা থেকে শুরু করে জীবন বিজ্ঞানের ডিএনএ-র গঠন, সবকিছু নিয়েই আগ্রহ রয়েছে মানুষের| যেভাবে সময় এগোচ্ছে বা যেভাবে বিজ্ঞান এগোচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে একদিন যে বিজ্ঞানই সবকিছুর উপরে অবস্থান করবে তা বলাই বাহুল্য| চিকিৎসায় বিজ্ঞানের অগ্রগতি খুলে দিয়েছে জটিল চিকিৎসার নানা পথ| তারই সাথে মানুষের মন থেকে কুসংস্কারের পর্দা সরাতেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই বিজ্ঞান|
এবার সেই বিজ্ঞানের নানা দিককে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগী ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সায়েন্স মিউজিয়াম’| পদার্থবিজ্ঞানের অতিপরিচিত ‘ঈশ্বর কণা’ এবং ‘ভুতুড়ে কণা’ যারা বিজ্ঞানের ভাষায় হিগস-বোসন কণা এবং নিউট্রন কণা বলে পরিচিত এই দুই রহস্যে আবৃত কণা নিয়ে এই মুহুর্তে কি কি গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা, কিভাবে তাদের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টায় দিনরাত এক করছেন বিজ্ঞানীরা খাস কলকাতায় বসে এবার জানতে পারবেন সাধারণ মানুষ| কলকাতায় বসেই সেইসব গবেষণা প্রত্যক্ষ করতে পারবেন তিলোত্তমার নাগরিকরা|
ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কলকাতাসহ মোট চারটি শহরে ‘বিজ্ঞান সমাগম’ নামক বিজ্ঞানের এক মহা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে| কলকাতা ছাড়াও মুম্বই, ব্যাঙ্গালুরু ও দিল্লিতেও এই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে| আগামী ৮ই মে মুম্বই শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রদর্শনীর সূচনা হবে| মুম্বইয়ের নেহেরু সায়েন্স মিউজিয়ামে এই প্রদর্শনী শুরু হওয়ার পর তা চলবে টানা দুই মাস| এইভাবে প্রথমে মুম্বই এবং তার পরে ব্যাঙ্গালোরের পর নভেম্বর মাসে কলকাতার সায়েন্স সিটিতে এই মহা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে| জানা গেছে, প্রতিটি শহরেই দুই মাস করে থাকবে এই প্রদর্শনী|
হিগস বোসন কনার সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র বসুর নাম| বর্তমানে এই কণা নিয়ে গবেষণা চলছে ইউরোপীয় পরমানু গবেষণা কেন্দ্র ‘সার্ন’-এ| জানা গেছে, এই গবেষণায় যেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়েছে তাও এই প্রদর্শনীতে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে| এর পাশাপাশি, তামিলনাড়ুতে ইন্ডিয়ান নিউট্রিনো অবজারভেটরি গড়ে উঠেছে তাও জানানো হবে এই প্রদর্শনীতে| এই গবেষনার সাথে জড়িত রয়েছেন আরও পাঁচজন বাঙালি বিজ্ঞানী| তাই যথারীতি এই গবেষণা নিয়ে বিজ্ঞানমহলে উত্তেজনা তুঙ্গে| এই গবেষনার সাথে কলকাতার নাম জড়িত থাকার দরুন স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহিত শহরের বিজ্ঞানপ্রেমীরা| জানা গেছে, এই গবেষনার সাথে যুক্ত রয়েছে সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স-এর বিজ্ঞানী সুবোধ সরকারের নাম|
সূত্রের খবর, এই প্রদর্শনীতে শুধু সার্ন নয় বর্তমান বিজ্ঞানের গবেষনার নানা খুটিনাটি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দেখানো হবে| এই প্রদর্শনীতে যেইসব প্রকল্পকে তুলে ধরা হবে সবকটিই যথারীতি আন্তর্জাতিক প্রকল্প যাতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে| এই প্রকল্পগুলির মধ্যেই রয়েছে ‘লেসার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অবজারভেটরি’| এছাড়াও মহাকাশ গবেষনায় ব্ল্যাক হোলের আবিষ্কার সাড়া ফেলেছিল গোটা বিশ্বে| বিজ্ঞানের জয়গানের যুগে এই ধরনের আবিষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানমহল| এছাড়া হাওয়াই দ্বীপে মহাকাশ গবেষনার জন্য তৈরী করা হচ্ছে একটি থার্টি মিটার টেলিস্কোপ| সেই টেলিস্কোপটিও থাকবে এই প্রদর্শনীতে| জানা গেছে, এই বিষয়গুলির সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীগণও উপস্থিত থাকবেন এই প্রদর্শনীতে| তারাই এই বিষয়গুলি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরবেন|
আগামী নভেম্বর মাস থেকেই কলকাতার সায়েন্স সিটিতে শুরু হবে এই প্রদর্শনী| সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলেই এই প্রদর্শনী প্রতক্ষ্য করতে পারবেন| তবে এর জন্য আলাদা টিকিটের ব্যবস্থা করা হবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি| এই খবরে বড়দের সাথে সাথে যথারীতি খুশি শহরের খুদে বিজ্ঞানপ্রেমীরাও|