দুঃস্থদের জন্য দুঃস্থরা।
অভাবী ছাত্রদের পাশে অভাবী ছাত্ররা। স্কুলের উদ্যোগে। এমন ভাবনাকে বাস্তবায়িত করেছে মধ্য-কলকাতার একটি স্কুল। বৌবাজারের লিং লিয়াং স্কুল।
লিং লিয়াং স্কুলে নব্বই ভাগ ছাত্রছাত্রীই আসে নিম্নবিত্ত বা বলা ভাল দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থিত পরিবার থেকে। লিং লিয়াং স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার।
স্কুলের প্রিন্সিপাল মনিকা ভিনসেন্ট জানিয়েছেন, তাঁরা যখন ভর্তি নেন, তখন পরিবাররে আর্থিক আয় বা বাবার আর্থিক উৎস জানতে চান না। কিন্তু শুধু এটুকু লক্ষ্য থাকে আর্থিক দুরবস্থার জন্য কোন পড়ুয়া যেন মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য না হয়।
স্কুলে বেশিরভাগ পড়ুয়াই আসে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার থেকে। স্কুলের আশেপাশের অঞ্চলের বাসিন্দা, কারোর অভিভাবক ছোট ব্যবসায়ি। কেউ হোটেলে ওয়েটারের কাজ করে। আবার কেউ দোকানের কর্মচারি।
ভর্তির সময় স্কুলের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৪০ টাকা করে নেওয়া হয়। কোনও কোনও অভিভাবক একটু বেশি দিতে চায়, কিন্তু স্কুল অনুমোদন করে না। স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে কিছু পড়ুয়ার অভিভাবকের কাছে ৪০ টাকা হয়ত খুব সামান্য অঙ্ক কিন্তু সকলের কাছে নয়। কারুর হয়ত দুই বা তিনজন বাচ্চা। তাদের যদি ১০০ টাকা দিতে হয় তখন সেটা তাদের চিন্তায় ফেলবে।
৪০ টাকা সামান্য খুব ছোট একটা অঙ্ক। কিন্তু ১০০০ জন ছাত্রছাত্রী যখন প্রত্যেকে হাত বাড়ায় তখন সেই সামান্য অঙ্ক আর সামান্য থাকে না। অঙ্কটা ৪০,০০০ এ গিয়ে দাঁড়ায়।
আর্থিক সহায়তা পাবার জন্য দুঃস্থ পড়ুয়াকে স্কুলের কাছে আবেদন করতে হয়। চার সদস্যের কমিটি সেই আবেদন খতিয়ে দেখে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রিন্সিপালও থাকেন ওই কমিটিতে।
স্কুলের পুওর ফান্ড কমিটির এক সদস্য নুসরত জাহান। লিং লিয়াং স্কুলে গত ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। নুসরত জানিয়েছেন, আর্থিক সাহায্যের জন্য শুধু মেধা নয়, পরিবারের আর্থিক অবস্থাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। মানে কেউ দুঃস্থ এবং মেধাবী হলে তবেই সাহায্য পাবে এমন নয়। সাধারণ মেধার দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাশেও থাকবে স্কুল। সত্যিই কার সহায়তা দরকার শুধু সেটুকুই দেখা হয়। কিন্তু তাদের পড়াশোনার ইচ্ছেটা জরুরি।
এই স্কুলেরই ইলেভেনের ছাত্র শাইস্তা শাকিল। ক্লাস নাইন থেকে সে স্কুলে আর্থিক সাহায্য পেয়ে আসছে। তার কথায়, স্কুল সাহায্য না করলে তাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হত এতদিনে। ক্লাস নাইনে সে শুনেছিল ইলেভেনে পড়ার খরচ বাড়বে। তার বোন আছে। সেও পড়াশোনা করে। বাবা দু’জনের পড়ার খরচ চালাতে পারত না। বাবার কাজও তখন মন্দায় চলছিল। আয় কমে গিয়েছিল শাইস্তের বাবা পালিশের কাজ করেন।
লিং লিয়াং-এর শিক্ষকরা মনে করেন, এই ফান্ড সম্পূর্ণভাবে স্কুলের পড়ুয়াদের নিজেদের। স্কুল বিশ্বাস করে বিন্দু বিন্দুতেই সিন্ধু হয়।