আমরা কয়েকদিন ধরেই পরিবেশ দূষণ নিয়ে কথা বলছি। বলব নাই বা কেন, যা অবস্থা শুনছি চারদিকের, তাতে করে চুপ করে বসে থাকার অর্থ সেই কালিদাসের গল্পের মত- যে নিজে বসে থাকা গাছের ডালই কাটতে শুরু করে দিয়েছিল। তাই বিভিন্ন খবর নিয়ে পর্যালোচনা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে করে সচেতন থাকা যায়, পাশাপাশি এইসব খবরের সঙ্গে থাকতে থাকতে নিজে থেকেই আমরা পরিবেশের জন্য কিছু ভালো কাজ করে ফেলব। চেন্নাইয়ে সাম্প্রতিককালের জলের হাহাকার ভাবিয়েছে আমাদের সকলকেই। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচুর মানুষ সরব হয়েছেন। যে কোনো জায়গাতেই এখন এই অবস্থা হতে পারে। আমাদের রাজ্যেও যখন তখন জলের হাহাকার দেখা দিতে পারে, যদি আমরা সচেতন না হই।
কেন্দ্রীয় সংস্থা দুর্গাপুর সিএসআইআর-এর সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীরা জানালেন, তাঁদের সংস্থা আর্সেনিক, ফ্লুরাইড এবং আয়রন রোধ করার মত একটি ফিল্টার তৈরী করেছে। এই গবেষণার সাফল্যের ফলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি উঠে আসছে, তা হল এর ফলে বাড়ির বর্জ্য জলকে পরিশোধন করে বাড়িতেই পুনর্ব্যবহার করার প্রযুক্তি উন্মোচিত হল। সিএমইআরআই-এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ডঃ হরিশ হিরানি জানান, তাঁদের এই সংস্থা বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরী করে থাকে। যা তৈরির পর বিভিন্ন কোম্পানিকে হস্তান্তরিত করা হয়। এর পরে সেই কোম্পানিগুলি নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন পণ্য তৈরী করে। তবে নতুন আবিষ্কৃত এই জল পরিশোধনের প্রযুক্তিটি নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনও কোম্পানি যেহেতু এগিয়ে আসেনি, তাই তাঁরা কোনও রাজ্য সরকার বা পুরসভা পঞ্চায়েত থেকে আগ্রহ দেখলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সশ্লিষ্ট এলাকাতেও কাজ করতে ইচ্ছুক হবেন। ওই সংস্থার দাবি, জলের অপচয় রোধ করতে এই প্রযুক্তি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে। তবে জলের অপচয় রোধ করতে হলে জল সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
ওই গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানী ডঃ প্রিয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাড়ি থেকে নির্গত বর্জ্য জলকে পরিশোধন করে চাষের জল সহ নিত্যদিনের অন্যান্য বিভিন্ন কাজের উপযুক্ত করার জন্য এই পদ্ধতি কেউ যদি প্রথমবার কোনও এলাকায় তৈরী করতে চায়, তাহলে খরচ পড়বে প্রায় দু-আড়াই লক্ষ টাকা। তারপরে কর্তৃপক্ষকে প্রতি বছর শুধুমাত্র ফিল্টার পাল্টালেই হয়ে যাবে। পাশাপাশি যদি বর্জ্য জলকে পানীয় জলে পরিবর্তিত করতে হয়, সেক্ষেত্রে খরচ হবে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। এইভাবে কিন্তু আমরা আমাদের চারপাশের অপচয় হওয়া জলকে শোধন করে কাজে লাগাতেই পারি। তাতে আমাদের জলের অপচয় যেমন রোখা সম্ভব হবে আবার অতিরিক্ত জল খরচ বাঁচানোও সম্ভব হবে।