চলচ্চিত্র যখন জীবনের আয়না

চলচ্চিত্র যখন জীবনের আয়না

কেমন হত যদি আপনার জীবন এর গল্প হয়ে উঠত কোনও শিল্পীর ক্যানভাসের অসমাপ্ত ছবি !

জঁ ফ্র্যাঙ্কো ল্যাগুইওনি-র দ্য পেইন্টিং ছবিটি এরকমই এক  অসমাপ্ত ক্যানভাসের গল্প। সেখানে মানবিক ভালবাসা, সামাজিক বিধি- নিষেধ, বৈষম্য আর কুসংস্কার একঝাঁক প্রশ্নের মুখোমুখি।

২০১১ সালে মুক্তি  ফ্রান্সে। ফরাসী ভাষায়ে নির্মিত একটি অ্যানিমেশন  ছবি।

আসা যাক গল্পে-

একটি ক্যানভাস।সেখানে তিন ধরনের চরিত্র

প্রথমভাগে  আসে, অলডানস।তারাই সংখ্যা গরিষ্ঠ ।শিল্পী তাঁর সমস্ত রঙ ঢেলে রঙিন করেছেন এদের।নতুন সমাজ তৈরি হল এদের নেতৃত্বেই।

দ্বিতিয়ভাগে  আসে,অসমাপ্ত হাফিস। শিল্পী এদের পুরো রঙে রাঙাননি।

আর শেষে, স্কেচেস। পেন্সিলের একটা স্ট্রোকে তাদের লাইন ড্রইং করেই ছেড়ে দিয়েছেন চিত্রকর।

এরকমভাবেই, অলডানস  রামো হাফিস ক্লেয়ার এর প্রেমে পড়ে। নিষিদ্ধ প্রেম।কড়া নজর ধেয়ে আসে অলডানস নেতার। সামাজিক পরিকাঠামো বৈষম্যে ভরা।

প্রেমিক প্রেমিকা ঠিক করে নিজেদের রাস্তা নিজেরাই বেছে নেবে। এই পেইন্টিং এর ফ্রেম ছেড়ে পালাবে। সঙ্গে আসে ক্লেয়ারের বন্ধু লোলা আর কুইল

painter-1

অলডানস নেতা চান হাফিস আর স্কেচেস দের ফ্রেম থেকে উৎখাত করতে। তবেই গোটা ফ্রেম জুড়ে তাদের অধিকার থাকবে। এ যেন বাস্তবেরই প্রতিচ্ছবি।

 লোলা জানায় তারা যদি আসল শিল্পী কে খুঁজে পায় তবে ক্লেয়ার  হাফিস থেকে অলডানস এ পরিণত হতে পারবে ।

তারা বেরিয়ে পড়ে শিল্পীর খোঁজে। প্রশ্ন একটাই। কেন শিল্পীর ভাবনায় এই বিভাজন? শিল্পীর এই খোঁজ যেন মানুষের ঈশ্বর কে খোঁজার সমান।

মানুষেরও যুগ যুগ ধরেই ঈশ্বরের কাছে একই প্রশ্ন। সমাজের এত বিভাজন কেন!

মানবপ্রাণ সৃষ্টির পর তিনি কি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন সন্তানদের থেকে? না কি সাম্যের দায় মানুষের কাঁধেই?

গল্প এগোয়।

 শিল্পীর ঘরে পৌঁছয় তারা। সে এক অশান্ত পরিবেশ। অনেক অসমাপ্ত ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনওটা নষ্ট। কোনওটা আবার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এলোপাথাড়ি রুক্ষতায়।

এক একটা ক্যানভাস যেন এক একটা সমাজ। সমাজের মানুষগুলোও আলাদা।

তারা প্রত্যেকেই এই তিনটি চরিত্রকে জীবনের অর্থ বুঝতে সাহায্য করে।

 এক অর্ধনগ্ন নারী। তার আক্ষেপভরা প্রশ্নমালা।  শিল্পীরা স্বার্থপর। তাঁরা ভালবাসতে জানেননা। তাঁরা নিজের সৃষ্টিতেই বিভোর।

শিল্পীর দেখা মেলে। বাস্তবের পৃথিবীতে। তিনি জানান বিভাজন তাঁর সৃষ্টি নয়। মানুষ নিজেই সৃষ্টি করেছে।

বেশ কিছু রঙের কৌটো নিয়ে তারা ফিরে আসে। নিজেদের পূর্ণতা নিজেরাই খুঁজে পায়। সমানাধিকার ফেরে।

painter-2

লোলা  ফিরে যায়।  শিল্পীর কাছেই। বাস্তবে। শিল্পীর সঙ্গে থেকে অন্য মাত্রায় চিনতে চায় জীবনকে।

এই ছবি চলচ্চিত্রের চেনা সীমা অতিক্রম করে অন্য জীবন দেখায়

সম্প্রতি নবম কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব এর শেষ দিনে নন্দন ৩ প্রেক্ষাগৃহের শেষ ছবি হিসাবে প্রদর্শিত হল দ্য পেইন্টিং।   

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...