কাঠিতে জড়ানো একরাশ গোলাপি তুলো। কখনো বা তুলোর বল। হাওয়ার মতো ফুরফুরে সেই বস্তুকে কেউ বলে ‘বুড়ির চুল’। কারুর কাছে ‘হাওয়াই মিঠাই’। আবার কেউ ডাকে ‘কটন ক্যান্ডি’ নামে।
ফেয়ারি ফ্লস,ক্যান্ডি ফ্লস কিংবা স্পুন সুগার এক এক দেশে এক এক নাম। তবে শরতের মেঘের মতো দেখতে এই মিঠাইটিকে ছোট থেকে বড় সকলেই পছন্দ করে। এ যেন এক টুকরো ছোটবেলা। গলির রাস্তায় ঘন্টির আওয়াজ কানে গেলেও মন আনচান।
সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় কটন ক্যান্ডি ওরফে হাওয়াই মিঠাইয়ের বয়স কিন্তু ৫০০ ছাড়িয়েছে। উৎপত্তি মধ্যযুগে।
সেই সময় ধনী বাড়িতে চিনিকে জলে ফুটিয়ে লম্বা লম্বা সুতো তৈরি করা হত। তারপর কাঠির মাথায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলের মতো জড়িয়ে দেওয়া হত। হাওয়া লাগলেই ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বেঁধে যেত।
সেই বস্তু কিন্তু এখনকার মতো এমন পলকা ছিল না। দেখতে ছিল অনেকটা চিনির সিমাই-এর মতো। বেশ ব্যয় সাপেক্ষ ছিল হাওয়াই মিঠাই তৈরি। সময় সাপেক্ষও বটে। তাই কেবলমাত্র ধনী বাড়িতেও তৈরি হত।
ষোড়শ শতকে ইতালিতে ‘ক্যান্ডি স্পুন দেখা যেত। এই পর্যটকের ডায়েরি থেকে জানা যায় প্রায় ১২৮৪ রকমের ক্যান্ডি স্পুন তিনি দেখেছিলেন ভেনিস শহরে।
এখন যে তুলোর মতো কটন ক্যান্ডি দেখা যায় তাকে জনপ্রিয় করে তোলেন উইলিয়ম জে মরিসন। পেশায় দাঁতের ডাক্তার এই মার্কিন মানুষটি ১৮৯৭ সালে বন্ধু জন সি. ওয়ারটনের সঙ্গে মিলে হাওয়াই মিঠাই তৈরির জন্য প্রথম মেশিন আবিষ্কার করেছিলেন। মেশিনে চিনি দিয়ে যে বস্তুটি তৈরি করলেন তাঁরা, সেটা খুব একটা নজর কাড়েনি সেই সময়। তবে সেই একই বছরে মরিসন এবং ওয়ারটন তাদের মেশিনে তৈরি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাজির হন সেন্ট লুইসের বিশ্ব মেলায়। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁরা।
জোসেফ লুইক্স নামে তাঁদের এক ডাক্তার বন্ধু অভিনব এই মিঠাই-এর নাম দেন ‘কটন ক্যান্ডি’।
১৯৪০ থেকে কটন ক্যান্ডি তৈরির মেশিন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কীভাবে ভারতে প্রবেশ করল তা নিয়ে বিশদ তথ্য বিশেষ পাওয়া যায় না। সম্ভবত বিদেশিদের হাত ধরেই ভারতে পরিচিত হয়ে ওঠে হাওয়াই মিঠাই।
হাওয়াই মিঠাই তৈরিতে উপকরণ হিসেবে লাগে স্পিরিট, চিনি, তেল আর হালকা খাওয়ার রঙ। সাদা হাওয়াই মিঠাইও পাওয়া যায়। গোলাপির সঙ্গে সঙ্গে লাল, কমলা, নীল, রামধনুর দেখাও মেলে।