কলকাতার মৃৎশৈল্পিক অঞ্চল বলতে শুধুমাত্র কলকাতা বা বাংলাই নয়, সারা বিশ্ব এক ডাকে চেনে কুমোরটুলিকে। যে কোনও রকম প্রতিমা তৈরির আখড়া এই অঞ্চল। এখানকার খ্যাতি এমনই পরিবৃত, যে কুমোরটুলির নাম ভাঙিয়ে অন্যান্য শিল্পীরা তাদের নিজেদের তৈরী প্রতিমা বিক্রি করেন। পাশাপাশি কিছুদিন কুমোরটুলির কারিগরের কাছে তালিম নেবার পর নিজেদের স্বাধীন ব্যবসা গড়ে তুলেছেন অনেকেই নিজ নিজ অঞ্চলে। এ হেন কুমোরটুলির দূর্গাপুজো অনেকদিন থেকেই আলাদা স্বকীয়তা অর্জন করতে পেরেছে।
এবারে ওই এলাকার মানুষজন একটি অভিনব ভাবনার উদ্যোগ নিল। দুটি বেসরকারি সংস্থা এবং কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের তৈরী সংগঠন কুমোরটুলি আর্ট ফোরামের উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড আর্ট ডে এবং বাংলা নববর্ষ উদযাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হল। রবিবার এবং সোমবার ‘রং মাটির পাঁচালি’ নামাঙ্কিত একটি কার্নিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছিল ওই এলাকায়। গোটা কুমোরটুলি এলাকাকে ৩০ জন শিল্পী মিলে নানান রকম শিল্পকর্ম তৈরী করে সাজিয়ে তুলেছেন। রঙে রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে ওই চত্ত্বর। চিরাচরিত মূর্তি ও প্রতিমা তৈরির বাইরে পেশাদারি এবং জীবিকামুখী কাজের চাপ থেকে মুক্ত হয়ে শিল্পীদের মধ্যে থাকা বহুমুখী নান্দনিক সত্ত্বার প্রকাশ ঘটেছে এই কার্নিভ্যালে। শুধু এখানকার শিল্পীরাই নন, পাভলভ হাসপাতালের দু'জন আবাসিক, পিংলার নয়াগ্রামের ১০জন পটচিত্র শিল্পী, আর্ট নিয়ে পাঠরত একাধিক কমবয়সী ছাত্র-ছাত্রী এই উৎসবে কুমোরটুলি সাজানোর উদ্যেশ্যে যোগ দিয়েছিল। আয়োজক সংস্থার অন্যতম কর্তা সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রথম বছর এইরকম কার্নিভ্যালের আয়োজন করে এখানকার শিল্পী, বাসিন্দা সর্বোপরি সাধারণ মানুষের যে সাহায্য, সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছে তা অভিভূত হওয়ার মত। প্রত্যেক বছর এই ধরণের কার্নিভ্যালের আয়োজন করার কথা ভাবছেন তিনি। কুমোরটুলির তরুণ শিল্পী এই ধরণের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আপ্লুত। গতানুগতিক মূর্তি গড়ার কাজ থেকে বেরিয়ে শৈল্পিক ভাবনার এমন কাজ সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়। আগামী বছর থেকে আরো সংগঠিতভাবে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করার কথা ভাবছেন সকলেই।