ওরা ভাঙছে সিলেবাসের আমরা-ওরা

স্যালাডের বেলপেপার ঠিক কীভাবে কাটতে হয়?

মোজারেলা চিজ ঠিক কখন গ্রেড করলে পাস্তায় ভালভাবে মিশবে।

অলিভ অয়েলের ধরণধারন কেমন?

ইস্ত্রি কতটা গরম করলে লিনেন শার্ট কুঁচকে যাবে না ?

এসবই স্কুলের সিলেবাসে। ছাত্ররা মন দিয়ে শিখছে এই সব তথাকথিত বাড়ির কাজগুলো। পরীক্ষা দিচ্ছে প্রজেক্ট করছে। ছাত্রীরা নয়। শুধু ছাত্ররাই।

এত দিন পর্যন্ত ঐচ্ছিক বিষয়ে মেয়েদের জন্য থাকত হোম সায়েন্স। সেলাই, রান্না, ঘর সাজানোর মত বিষয়গুলো থাকত মেয়েদের জন্য। ছেলেদের জন্য কার্পেনটারি, মেশিনারি, প্লাম্বিং কিংবা ইলেকট্রিসিয়ান স্কিল।

শ্রমের ক্ষেত্রে আমরা-ওরা’টা শুরু হয়ে যায় স্কুলের সিলেবাস থেকেই। কোন কাজ ছেলেরা করবে কোন কাজ মেয়েরা করবে নির্ধারণ করে দেয় সমাজ। মেয়েরা করবে ঘরের কাজ আর ছেলেদের কাজ বাইরে। স্কুলের সিলেবাসও সেই ভাষাতেও কথা বলে।

শ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভাজন দূর করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে স্পেনের মন্টেক্যাসেলো স্কুল। ইকুয়ালিটি ইজ লার্নড উইথ অ্যাকশন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে তারা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচলিত সামাজিক ধারনার বদল ঘটানোর চেষ্টা চলছে।

স্কুলের ক্যাম্পাসেই ক্লাস চলে। অনেক সময় ছাত্রের বাবারাও এসে যোগ দেন ক্লাসে। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব নেন সানন্দে।

স্পেনের ভিগো শহরের  মন্টেক্যাসেলো স্কুল। ২০১৮-তে স্কুলের সিলেবাসে হোম ইকোনমিক্স সহ বেশ কিছু নতুন বিষয় আনা হয়। কার্পেনটারি, মেশিনারি, প্লাম্বিং কিংবা ইলেকট্রিসিয়ান স্কিল। পরে আয়রনিং, সিয়ুইং, কুকিং-ও সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মন্টেক্যাসেলো স্কুলের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর গ্যাব্রিয়েল ব্রাভো সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কাজের কোনও লিঙ্গ হয় না। শিখে রাখলেই নিজের জীবনে চলতে সুবিধা হয়। নিজের বাড়ি নিজে পরিষ্কার করা, নিজের জামা নিজে আয়রন করা, নিজে হাতে খাবার বানানো এই ধরণের কাজগুলো প্র্যত্যেকের জন্য জরুরি। ছাত্ররা যখন নিজেদের জীবন শুরু করবে তখন তারা  বুঝতে পারবে। তাদের জানা জরুরি জামাকাপড় ইস্ত্রি, বাসন ধোয়া কোনটাইও শুধুমাত্র মেয়েদের কাজ’ নয়। 

ছাত্রদের জন্য স্কুলে আলাদা করে এধরনের ওয়ার্ক সেশন, ক্লাস শুরু ভাবনা মন্টেক্যাসেলো স্কুল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের। ছাত্রদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের ধারনা দূর করতে নতুন কিছু করতে চাইছিল স্কুল। তখনই এই ধরণের প্রজেক্ট এর পরিকল্পনা করা হয়।

 তবে ছাত্ররা কতটা আগ্রহ দেখাবে সে নিয়ে শুরুতে সংশয় ছিলই। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে। তারপরই প্রজেক্টের ক্লাস শুরু হয়। সেশনের প্রথমদিকে ছাত্ররা একটু আড়ষ্ট ছিল। কিন্তু ক্লাস যত এগিয়েছে তত তারা বুঝেছে সেলাই, আয়রন বা রান্না সবগুলোই খুব সাধারণ বিষয়। শিক্ষক-ছাত্র- অভিভাবক মিলে জমে উঠেছে প্রজেক্ট।

অনেক ছাত্র জীবনে প্রথমবার ইস্ত্রি ধরে স্কুলের ক্লাসেই। ইস্ত্রি ছ্যাঁকা আর জ্বলে যাওয়া শার্টের নানা মজা আর গল্পে গলে যায় স্টিরিও টাইপের দেওয়ালগুলো।

 ‘ঘরের’ কাজ শেখায় ছেলেদের আগ্রহ দেখে খুশি অভিভাবকরাও!

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...