তিন বিস্মৃত রমণীর জীবনালেখ্য রচনা করেছেন ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য। প্রথমজন হেমন্তকুমারী চৌধুরী। হেমন্তকুমারী চৌধুরীর কথা আজ আর কেউ মনে রাখেননি, অথচ স্ত্রীশিক্ষার বিস্তারে একটা সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এই ব্রাহ্ম কন্যা। মাত্র কুড়ি বছর বয়েসেই প্রথম মহিলা হিসেবে সম্পাদনা করেছিলেন প্রখ্যাত হিন্দি সাময়িকপত্র 'সুগৃহিণী', একসময় সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন বাংলা পত্রিকা 'অন্তঃপুর' এর। শিলং শহরে স্থাপন করেছেন বিদ্যালয় আর চিকিৎসাকেন্দ্র। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন পাটিয়ালায় ভিক্টোরিয়া কলেজে, ছিলেন দেরাদুনের পুর কমিশনার, হেমন্তকুমারী চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৫০) সবই করেছেন নিপুণতার সাথে। দ্বিতীয় বিস্মৃতা শারদামঞ্জরী দত্তও ছিলেন শিলং শহরের বাসিন্দা, শারদামঞ্জরীর আত্মজীবনী ‘মহাযাত্রার পথে’র সাহিত্যগুণ অসামান্য, ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী। ব্রাহ্মসমাজের গোঁড়ামীর প্রভাব তার মধ্যে থাকলেও স্বভাবে শারদামঞ্জরী ছিলেন উদার প্রকৃতির, আর শারদামঞ্জরীর পৌত্রী অঞ্জলি লাহিড়ী হলেন তৃতীয় বিস্মৃতা। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই অঞ্জলি কমিউনিস্ট পার্টির দিনরাতের কর্মী হয়ে ওঠেন, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সীমান্ত অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অঞ্জলী, মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে ডাকতেন 'জগন্মাতা' বলে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের থেকে বিশেষ সন্মান জানানো হয় অঞ্জলী লাহিড়ী কে। এই তিন ব্রাহ্ম কন্যাকে বিস্ময়ের সাথে স্মরণ করেছেন ঊষারঞ্জন, পাতায় পাতায় উঠে এসেছে এই অসামান্যা দের বিস্ময় গাথা।