মানুষ বাড়িতে বন্দি। কলকারখানা বন্ধ। গাড়ির চলাচল আপদকালীন। রোজকার চেনা চিৎকার, গাড়ির হর্ন, যেন রাতারাতি হারিয়ে গিয়েছে। সব কিছু স্তব্ধ।
একটু একটু করে অন্য ভাষায় কথা বলে উঠছে পৃথিবী। এ ভাষা পাখির ভাষা। এ ভাষা পশুর ভাষা। এ ভাষা মনুষ্যতর প্রাণীদের। যাদের কন্ঠ এতদিন ধরে হারিয়ে গিয়েছিল হাজার এক কোলাহলের ভিড়ে আজ অতিমারীর পৃথিবীতে সেই স্বরই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ।
২০২০- র বসুন্ধরা দিবস পৃথিবীর ইতিহাসে আলাদা করে দাগানো থাকবে চিরকাল। করোনার আতঙ্কে পৃথিবী কাঁদছে। ক্রমশ যেন 'গুহবাসী' জীবনে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ অসুখের প্রকোপ থেকে বাঁচতে। ততই এই গ্রহের ওপর অধিবাসী যাদের অধিকারকে মানুষ মানতে চায়নি কোনদিন তাদের অধিকার প্রাণ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে আজ। জমে থাকা টক্সিন এভাবেই উগরে দিচ্ছে প্রকৃতি। প্রায় ২ মাস ধরে বদলে গিয়েছে বিশ্বের ছবি। বদলেছে প্রকৃতিও। কলুষ নাশ করছে আপন খেয়ালে।
এতদিন দূষণের নিরিখে ভারত সহ শীর্ষে থাকা অন্যান্য রাষ্ট্র গুলোয় দূষণের হার নেমেছে ৫ শতাংশ। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রব জ্যাকসন জানিয়েছেন বিশ্বের দূষণ হার এভাবে কমার নজির আর নেই। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম।
বায়ু দূষণের মাত্রাও কমেছে। দিল্লির মতো বায়ু দূষনে প্রায় বিপর্যস্ত শহরের ছবিটাও বদলেছে লকডাউনে। পরিষ্কার হচ্ছে নদীর জল। ভেনিসের ক্যানেলে ফিরেছে ডলফিন, রাজহাঁস। আফ্রিকার সাফারি পার্কে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সিংহ। ভারতে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, বারাণসীর গঙ্গার জল পানের যোগ্য হয়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুর, জাপান, উত্তর আমেরিকার রাস্তায় বন্য পশুরা নির্দ্বিধায় সংরক্ষিত বন থেকে বেরিয়ে এসেছে। মলম পড়ছে আকাশের ক্ষতেও। উড়ান চলাচল বন্ধ থাকায় ওজন স্তরের আশাজনক পার্থক্য দেখা গিয়েছে।
এভাবে প্রকৃতির সেরে ওঠাকে স্বাগত জানিয়েও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বিশ্ব জুড়ে এরকম আতঙ্কের পরিবেশ কাম্য নয়। তবে প্রকৃতি নিজেই যেন মানুষকে তার ভালো থাকার পথটা দেখিয়ে দিল। আগ্রাসী মনোভাব আর ক্ষমতার দম্ভে উন্মাদ নেশায় প্রাকৃতিক সম্পদ কে ক্ষতিগ্রস্ত করলে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অবশ্য জোর দিয়েছেন মানুষের সচেতনতায়। অতিমারীর সংকট পেরিয়ে আসার পর পৃথিবী এবং প্রকৃতিকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে মানুষ তার ওপর নির্ভর করছে সভ্যতার ভবিষ্যত। বিখ্যাত পরিবেশবিদ থমাস লাভজয় বলেছেন, ' এ হল এলার্ম, মানুষের কাছে প্রকৃতির। যদি মানুষ নিজে সচেতন না হয় এভাবেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রক্রিয়া চলবে। মানুষের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।'