উড়ুক্কু যুদ্ধবাজদের গল্প - পর্ব ৪

লস এঞ্জেলেসের একটা ক্লাব। 'পিজিয়ন ক্লাব'। আশ্চর্য লাগছে? পায়রাদের সংগঠন? এমন আবার হয় নাকি?

নিশ্চয়ই হয়। প্রায় দশ হাজার পায়রা থাকত সেখানে। এরা প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নানাভাবে নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল।

তেমনি এক পায়রা 'স্পাইক'। সাহসী, বুদ্ধিমান তো সে ছিলই। এছাড়াও তার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল।

খারাপ আবহাওয়াকেও হার মানাতে পারত সে।

জানায় জীবনের বার্তা নিয়ে ঝড়, বৃষ্টি সবকিছুই অতিক্রম করেছে সে।
মজার কথা, একবারও সে আহত হয়নি।

শত্রুপক্ষের গুলির মুখোমুখি হয়েছে। তবুও তাকে কাবু করা যায় নি।

যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পায়রাদের সাধারণত শত্রুপক্ষের আঘাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর কৌশল শেখানো হত। বুদ্ধিমত্তার বিচারে তারা শিখে নেয় সেসব।

Pigeon-war-hero1

কিন্তু যুদ্ধ-পাখিদের আরও এক শত্রু থাকে। খারাপ প্রকৃতি। আর সে বিরোধিতা করলে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়ে সাহসী এই পাখিরা।

স্পাইক নামের এই পায়রাটি অদ্ভুতভাবে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও নিজের প্রত্যেকটা মিশন সম্পূর্ণ করত।

একবার প্রচন্ড ঝড়ের মুখে পড়েছিল সে। সৈন্যরা তার বার্তা পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল।

কিন্তু হাল ছাড়েনি স্পাইক। ডানায় ঝড়, বৃষ্টি সঙ্গে নিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছেছিল। অবাক হয়েছিল সৈন্যবাহিনী।

শোনা যায় তারপর থেকে, আবহাওয়া খারাপ থাকলে কোন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা এই পায়রার মাধ্যমে পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নিত সৈন্যবাহিনীর প্রধানরা।


মার্কিন সৈন্যবাহিনীর এক প্রধান - ক্যাপ্টেন এল ডেলহায়ার প্রথমবার এই পায়রাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে পাঠিয়েছিলেন ১৯২২ সালে। সমস্ত যুদ্ধ পাখিদের প্রতি তাঁর স্নেহ আজও দৃষ্টান্ত। পিজিয়ন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

স্পাইক ছিল তাঁর অন্যতম পছন্দের পায়রা। প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি মিশনে অক্ষত অবস্থায় অংশগ্রহণ করেছিল সে।

প্রকৃতির কাছে পৃথিবীর সমস্ত জীব অসহায়। কিন্তু এই খুদে যুদ্ধ-পাখির সঙ্গে প্রকৃতির ছিল এক অন্যরকম বন্ধুত্ব। বারবার একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিত তারা। সাহস আর বুদ্ধি দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ জয় করত স্পাইক। প্রকৃতিও যেন হার মেনে নিত।

যুদ্ধক্ষেত্রে তখন প্রকৃতি, সাহস সব মিলেমিশে এক।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...