উড়ুক্কু যুদ্ধবাজদের গল্প - পর্ব ৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত পেন্টাগন বিল্ডিং-এর তৃতীয় তলা। সেখানেই সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টার। তার বাইরে একটা পায়রা। শান্ত, স্থির। চোখগুলোয় বুদ্ধির ছাপ সুস্পষ্ট। শরীরের চারিদিকে ক্ষত। কিন্তু কোথাও কোন ভয়ের ছাপ নেই। অর্জুনের মত লক্ষ্যভেদের ব্রত যেন সঙ্গী তার।

সময়টা প্রায় একশো বছর আগে।

ওই পায়রাটিকে রাখা হয়েছে পেন্টাগন বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় অবস্থিত সৈন্যবাহিনীর হেড কোয়ার্টারের সামনে। একটি বিশেষ কাচের ঘরে।

অনেকেই আসছেন অফিসে। সকলেই অবাক হয়ে ভাবছেন পাখিটা এইভাবে আছে কী করে? এত শান্ত, ভয়হীন ভাবে?

আসলে পায়রাটি ''ট্যাক্সিডার্মিড''। বিশেষ রাসায়নিকের মাধ্যমে তাকে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। একেবারেই তার নিজের রূপে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন সবে শুরু হয়েছে। সমস্ত যোগাযোগের মাধ্যম বিধ্বস্ত। মার্কিন সেনারা ফ্রান্স থেকে একটি পায়রাকে নিয়ে এলেন। লক্ষ্য তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। নানান প্রয়োজনীয় বার্তা তাকে দিয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

পায়রাটির নাম প্রেসিডেন্ট উইলসন। যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম পায়রা যাকে এইভাবে ট্যাক্সিডার্মির মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়েছিল।

President-Wilson-body

কিন্তু খুদে চারপেয়ে প্রাণীটি যদি ভীতু হয়? যদি সঠিকভাবে তাকে তার উদ্দেশ্য বোঝানো সম্ভব না হয়?

তাই প্রথমেই তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিশনের অন্তর্ভুক্ত করলেন না। ‌

চলতে লাগল পায়রাটির প্রশিক্ষণ।

সকলকে অবাক করে দিয়ে এই পায়রা ভয়হীন রইল পুরো প্রশিক্ষণের সময়টা। খুব বুদ্ধিমান ছিল সে।

সামান্য ইঙ্গিত দেওয়া শুরু করলেই বুঝে যেত আসল বক্তব্য। তাকে প্রশিক্ষণ দিতে সেভাবে কষ্টই করতে হলোনা সৈন্যদের।

রোজই সে বার্তা পৌঁছে দিত এবং নিরাপদে ফিরেও আসতো।

কর্নেল জর্জ এস প্যাটন প্রথমবার তাকে সেন্ট মিহিয়েলে হওয়া যুদ্ধে পাঠিয়েছিল। তুলনামূলক নিরাপদ জায়গাটা। পায়রাটি তার বুদ্ধিমত্তায় খুব কম সময়েই নিজের কাজ সম্পন্ন করেছিল।

তারপর থেকেই তাকে নানা দুরূহ জায়গায় পাঠানো হতো।

একবার জার্মান সৈন্যরা আঘাত করেছিল তাকে। সাধারণত সৈন্যদের যেকোনো রকম আক্রমণ এড়িয়ে চলতে অভ্যস্ত ছিল সে। কিন্তু সেদিন পারেনি।

জার্মান সৈন্যদের গুলিতে নানা জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তার শরীরে। একটি চোখ এবং পা-ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লক্ষ্যে পৌঁছোনো প্রায় অসম্ভব ছিল। তবুও সে ফেরেনি। কাজ শেষ করে তবেই ফিরে এসেছিল।

তারপরেও প্রায় দশ বছর বেঁচেছিল।

সাধারনত এই যুদ্ধ-পাখিরা কর্ম-ক্ষমতা হারালে, একটি বিশেষ জায়গায় রেখে দেওয়া হতো তাদের।

শোনা যায় এই পায়রা কিছুতেই সেখানে থাকতে চাইতো না। বারবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যেতে চাইত।

তাই দিনের বড় একটা সময় তাকে পেন্টাগণ বিল্ডিংয়ে আনা হতো। সেখানে সৈন্যবাহিনীদের অফিসগুলোতে ঘুরে বেড়াতো সে।

তাই তার দেহকে সংরক্ষণ করে ওখানেই রাখা হয়েছিল।

যুদ্ধের সেসব অন্ধকার দিন পেরিয়ে গেছে। মানুষ সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কিন্তু এই অবলা প্রাণীদের আত্ম-বলিদানের স্মৃতি আজও ঘুরে বেড়ায় সেই যুদ্ধক্ষেত্রে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...