আজ বলবো এই রাজ্যের ফ্রেডরিক নগরের এক ২৩২বছর বয়সী রেস্তোরাঁর কথা, যার সাথে ঘটেছে ইতিহাস ও বর্তমানের মেলবন্ধন। এখানে ‘ইতিহাস’ শব্দের প্রয়োগ করলাম অতীত নয় - কারণ সব অতীত ইতিহাস নয়। আর এই রেঁস্তোরার সাথে যুক্ত আছে তেমনই ইতিহাস। তাই জানাবো।
‘ফ্রেডরিক নগর’ নামটি অচেনা লাগছে! কিন্তু এই রাজ্যেই আছে এই নগর এবং তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেহাত কম নয়। এই ফ্রেডরিক নগর হলো বহুল পরিচিত ‘শ্রীরামপুর’। রেঁস্তোরা প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এই শ্রীরামপুরের জন্মকথা একটু না বললেই নয়। সময়টা ১৭৫৫সাল - বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁর অনুমতিতে ডেনিশরা প্রথম বাংলাতে উপনিবেশ গড়ে ব্যবসা শুরু করে স্থাপন করেন ‘ফ্রেডরিক নগর’ এবং তার নামকরণ হয় পঞ্চম রাজা ফ্রেডরিকের নামানুসারেই। আর সেখানেই হুগলী নদীর ধারে, নিশান ঘাটের উপর ১৭৮৬সালে সূচনা হয় এক বিলাস বহুল রেঁস্তোরা ডেনমার্ক টাভর্নের।
তৎকালীন বিলাস বহুল এই রেঁস্তোরা ডেনমার্ক টাভর্ন নির্মিত হয় এক ব্রিটিশ সাহেব জেমস পারের হাত ধরে। তিনি তার আগে ‘লন্ডন টাভর্নের’ (কলকাতায়) সাথে যুক্ত ছিলেন। ফলে এই ব্যবসার সম্পর্কে তাঁর ছিল সম্যক জ্ঞান। সেই অভিজ্ঞতাই তাকে ‘শ্রীরামপুরে ডেনমার্ক টাভর্ন’ এ উৎসাহিত করে। সেই সময় জলপথ ছিল একমাত্র বাণিজ্যিক মাধ্যম, তাই সহজেই যাতে এই হোটেল দৃষ্টিগোচর হয় তাই পরিকল্পনানুযায়ী হুগলী নদীর তীরে হয় এর স্থাপনা। আর রাতারাতি ইউরোপীয়দের কাছে জনপ্রিয় এই রেঁস্তোরা খ্যাতির শীর্ষে ওঠে, এমনকি তার বিজ্ঞাপনও বেরোয় Calcutta Gazette - এ। এতে তার স্টেটাস গত সাফল্য খানিক প্রতিফলিত হয়। এই রেঁস্তোরা সম্পর্কে জানা যায় ব্যাপটিস্ট মিশনারী উইলিয়াম ক্যারির বই থেকে।
কিন্তু কালক্রমে বিস্মৃতির অতলে চলে যায় এই বিলাস বহুল রেঁস্তোরা। দীর্ঘদিন পোড়ো বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর আবার নবকলেবরে ২০১৮সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেনের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ফিরে এসেছে। কিন্তু এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০০৮সালে The National Museum Denmark (NMD), State Heritage Commission ও INTACH এর উদ্যোগে এবং ২০১৫তে পুরোনো ছবি সংগ্রহ করে নতুন করে শুরু হয় তার নির্মাণ কার্য। ঐতিহ্য বজায় রাখতে রাখা হয় পুরোনো চেহারা।
যাইহোক ‘The Park’ এর তত্ত্বাবধানে বিশাল ক্যাফে, কাঠের ঘোরানো সিঁড়ি, কাঠের মেঝে, এন্টিক আসবাবের সমাহারে আবার নবকলেবরে ফিরেছে সেই পুরোনো দিনের চেনা আমেজ। এখানে এলে টাইম মেশিন ছাড়াই মন ফিরে যেতে বাধ্য সেই পুরোনো ইতিহাসের সাথে সাক্ষাতে। ব্যস্ততম হোক বা দীর্ঘ লকডাউন থেকে মুক্ত হতে ঘুরে আসতেই পারেন এই ফ্রেডিক নগর থুড়ি শ্রীরামপুরের ডেনমার্ক টাভর্ন থেকে - নেহাত মন্দ লাগবে না।