স্বপ্নপূরণের কোনও বয়স হয় না। যে কোনও বয়সে যে কোনও পরিস্থিতিতে স্বপ্নপূরণ সম্ভব, যদি শুধু ইচ্ছেটাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
এই কথাই আরও একবার প্রমাণ করলেন, হরভজন কৌর। বয়স ৯৪। চণ্ডীগড়ের আর পাঁচজন নব্বই ছোঁয়া বৃদ্ধার সঙ্গে তাঁর বিশেষ তফাৎ নেই। কিন্তু তফাতটা মনের জোর আর ইচ্ছেতে।
জীবনের স্বপ্ন ছিল সফল ব্যবসায়ী হবেন। ছোটবেলা থেকে বুকের মধ্যে পুষে রাখা স্বপ্নটা কোনওদিন বাস্তব করে উঠতে পারেননি। নব্বই- এর দরজায় পৌঁছে আদৌ যে তার কোনও সম্ভাবনা আছে সে আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বপ্নের শেষ বলে কিছু হয় না। তেমনটাই ঘটেছিল হরভজনের ক্ষেত্রেও।
ঘটনার শুরু বছর চারেক আগে। ২০১৬ সালে। হরভজনের মেয়ে রাভিনা সুরি তাঁর কাছে জানতে চান, ‘তাঁর কোনও অপূর্ণ ইচ্ছে আছে কিনা?’
হরভজন এড়িয়ে জাননি মেয়ের কথা। মেয়েকে জানান, ‘জীবনে স্বাধীনভাবে উপার্জন করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তাঁর পরিস্থিতি কখনও তাঁকে সে সুযোগ দেয়নি’।
হরভজনের মেয়ে তাঁকে বেসনের বরফি তৈরি করে বিক্রির পরামর্শ দেন।
হরভজনও নিজের নামে বরফির ব্যবসা শুরু করেন । বরফির ট্যাগ লাইনে লেখা হয়, ‘এ বরফি খেলে ছেলেবেলার কথা মনে পড়বে’। তৈরি করলেন নিজের ব্র্যান্ড।
প্রথম দিকে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরাই তাঁর তৈরি বরফি কিনতেন।
ধীরে ধীরে হরভজনের বরফির কদর বাড়তে থাকে। কয়েক বছর পর তিনি অর্ডার নিয়ে কাজ শুরু করেন। অনেকেই হাতে তৈরি বরফি নিতে আজকাল তাঁর বাড়িতে চলে আসেন।
ব্যাসন বরফি তৈরির জন্য সিদ্ধ থেকে শুরু করে বরফির আকৃতিতে কাটা-সব কাজ তিনি একাই করেন।
চার বছর আগে ৯০ বছর বয়সে নিজের স্বপ্নপূরণে হাতে তৈরি বেসনের বরফি বিক্রি শুরু করেন হরভজন। এখন তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী।
তার কাজকে স্বীকৃতি জানিয়ে শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা টুইটারে পোস্ট দেন। তাঁর পোস্টটি ভাইরাল হয়।
তিনি লিখেছেন, ‘যখন আপনি ‘স্টার্ট আপ’ শব্দটি শোনেন তখন এটি সিলিকন ভ্যালি বা বেঙ্গালুরুতে হাজার হাজার ডলার ইউনিকর্নস তৈরির চেষ্টা মনে আসে। কিন্তু এখন থেকে ‘স্টার্ট আপ’ শব্দটার সঙ্গে ৯৪ বছর বয়সী হরভজন কৌর- এর কথাও মনে করুন। কারণ এ নারীর কাছে কোনো বয়সই শুরু করার জন্য শেষ বয়স নয়। আমার কাছে তিনিই এ বছরের সেরা উদ্যোক্তা।’
তার এ পোস্টের পর হরভাজন ভাইরাল হয়ে উঠেছেন নেট দুনিয়ায়।