উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী তিথি থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে শিব নবরাত্রি উৎসব, চলবে চতুর্দশী তিথি পর্যন্ত। মহাশিবরাত্রির ঠিক পূর্ববর্তী এই ৯ দিনই শিব নবরাত্রি নামে সুপরিচিত। শিব নবরাত্রির এই ৯ দিন মহাকালকে বরবেশে দেখলে ভক্তদের সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। নবরাত্রির ৯ দিন আলাদা আলদা ৯ বেশে সাজানো হয় মহাকালকে।
২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে শিব নবরাত্রি পালন। চলবে ৮ মার্চ মহাশিবরাত্রি পর্যন্ত। এই ৯ দিন নয় বেশে ভক্তদের দেখা দেবেন তিনি-
২৯ ফেব্রুয়ারি- প্রথম দিন চন্দন শৃঙ্গার
১ মার্চ- দ্বিতীয় দিন- শেষনাগ শৃঙ্গার
২ মার্চ- ঘটাটপ শৃঙ্গার
৩ মার্চ- ছবিনা শৃঙ্গার
৪ মার্চ- হোলকার শৃঙ্গার
৫ মার্চ-মনমহেশ শৃঙ্গার
৬ মার্চ- উমা মহেশ শৃঙ্গার
৭ মার্চ- শিব তান্ডব শৃঙ্গার
৮ মার্চ- সপ্তধন শৃঙ্গার
মহাশিবরাত্রিতে, শিব নবরাত্রির শেষ দিন, বাবা মহাকাল বর রূপে আবির্ভূত হন। বাবা মহাকালকে সপ্তধন, ফল ও ফুল দিয়ে আরতি করা হয়। বাবা মহাকাল সোনার অলঙ্কারে সেজে ওঠেন। মহাকাল ও মাতা পার্বতীর বিবাহের আয়োজন করা হয়। সারা বছর শিবকে হলুদ নিবেদন করা না গেলেও বছরের এই সময়ে টানা নদিন তাঁকে হলুদ দেওয়া যায়। রুদ্র, অতিরুদ্র, মহারুদ্রাভিষেক হয় তাঁর।
হিন্দু বর্ষে পাঁচ নবরাত্রি পালনের বিধি আছে। চৈত্র নবরাত্রি ও শারদীয়া নবরাত্রি ছাড়াও দুই গুপ্ত নবরাত্রি পালনের প্রথা আছে।এছাড়া মহাশিবরাত্রির সময় পালিত হয় শিব নবরাত্রি। ভগবান শিবকে প্রসন্ন করার জন্য শিব নবরাত্রি পালন করেন ভক্তরা।
শিব নবরাত্রি উপলক্ষে দেশের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ স্থানে বিশেষ পুজো ও আরতি অনুষ্ঠিত হয়। তবে উজ্জয়িনীতেই এই উৎসবের মাহাত্ম্য সর্বাধিক। কারণ এই ভূমিতে শক্তি ও মহাকালের মিলন ঘটেছে। এই জ্যোতির্লিঙ্গই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ।
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরে রুদ্রসাগর হ্রদের তীরে অবস্থিত মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটিকে স্বয়ম্ভু বা শিবের সাক্ষাৎ-মূর্তি মনে করা হয়। মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি দক্ষিণামূর্তি নামে পরিচিত। ‘দক্ষিণামূর্তি’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’। এই মূর্তির বিশেষত্ব এই যে তান্ত্রিক শিবনেত্র প্রথাটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বরেই দেখা যায়।হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা শিব অনন্তকাল ধরে উজ্জয়িনীর শাসক।
পুরাণ অনুসারে, উজ্জয়িনী শহরটির নাম ছিল অবন্তিকা। কিংবদন্তি অনুসারে, উজ্জয়িনীতে চন্দ্রসেন নামে এক শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শিবভক্ত। একদিন শ্রীখর নামে এক কৃষকবালক প্রাসাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে শুনতে পায় রাজা শিবের নাম করছেন। সেও ছুটে মন্দিরে গিয়ে তার সঙ্গে প্রার্থনা শুরু করে দেয়। প্রহরীরা তাকে টেনে সেখান থেকে বের করে শহরের বাইরে শিপ্রা নদীর তীরে রেখে দিয়ে আসে। উজ্জয়িনীর পার্শ্ববর্তী দুই শত্রুরাজ্যের রাজা রিপুদমন ও সিংহাদিত্য সেই সময় উজ্জয়িনীর সম্পদের লোভে রাজ্য আক্রমণের কথা ভাবছিলেন। এই কথা শুনে শ্রীখর প্রার্থনা শুরু করে।
সেই খবর পৌঁছায় বৃধি নামে এক পুরোহিতের কাছে। তিনিও ভয় পেয়ে ছেলেদের অনুরোধে শিপ্রা নদীর তীরে গিয়ে শিবের কাছে প্রার্থনা শুরু করেন। ব্রহ্মার আশীর্বাদে দূষণ নামে এক দৈত্য অদৃশ্য হওয়ার অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছিল। শত্রুরাজারা দূষণের সাহায্যে উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তাদেরই জয় হয় এবং তারা সকল শিবভক্তের উপর অত্যাচার শুরু করে ।
অসহায় ভক্তদের প্রার্থনা শুনে শিব মহাকালের রূপে উজ্জয়িনীতে আবির্ভূত হয়ে চন্দ্রসেনের শত্রুদের ধ্বংস করেন। শ্রীখর ও বৃধির অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে বাস করতে রাজি হন। তিনিই হন রাজ্যের প্রধান দেবতা এবং শিবভক্তদের রক্ষাকর্তা। সেই থেকে উজ্জয়িনীতে মহাকাল রূপে শিব তার শক্তি পার্বতীকে নিয়ে বাস করছেন।