স্টিফেন রবার্ট আরউইন সারা বিশ্বের কাছে এক অবিস্মরণীয় নাম|’দি ক্রোকোডাইল হান্টার’ নামে পরিচিত এই মানুষটি বড় থেকে ছোট সকলের প্রিয় ছিলেন| অস্ট্রেলিয়ায় বব আরউইন ও লিন আরউইনের কোল আলো করে স্টিভ আসেন ১৯৬২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী|
মাত্র ৯ বছর বয়স থেকেই সরীসৃপ ধরার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করেন স্টিভ| সেই থেকে শুরু করে কুইন্সল্যান্ডে নানা ভলেন্টিয়ার কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন| প্রথমেই তিনি তার বাবা-মায়ের স্থাপিত অস্ট্রেলিয়ার একটি চিড়িয়াখানায় প্রানীদের খাবার দেওয়ার কাজ ও তাদের অল্পবিস্তর দেখাশোনার কাজ করতেন| স্টিভ ছোটবেলা থেকেই নানা সরীসৃপের সংস্পর্শে থেকে বড় হন|
ধীরে ধীরে এই ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি| সমগ্র বিশ্বের কাছে নিজের পরিচিতি তৈরী করেন সরীসৃপ বিশারদ হিসেবে| তাকে নিয়ে শুরু হয় একটি আন্তর্জাতিক টেলিভিশন সিরিজ ক্রোকোডাইল হান্টার| ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলেছিল এই ডকুমেন্টারী সিরিজটি| এই অনুষ্ঠানটিতে স্টিভের সাথে সহ-সঞ্চালকের কাজ করতেন তাঁর স্ত্রী টেরি|
১৯৯৭ সালে, একদিন তার বাবার সাথে কুইন্সল্যান্ডের তীরবর্তী অঞ্চলে ফিশিং ট্রিপে তিনি একধরনের নতুন নতুন কচ্ছপ আবিস্কার করেন| এরপর তাঁর আবিষ্কারকে সম্মান দিতে সেই কচ্ছপটির নামকরণ করা হয় আরউইন’স টার্টল|
২০০৬ সালে পোর্ট ডগলাসের কাছে বাট রিফ অঞ্চলে ‘ওশানস ডেডলিয়েস্ট’ নামক একটি ডকুমেন্টারী সিরিজ এর শুটিং করেন স্টিভ আরউইন| সেই সময়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে স্টিভ সিদ্ধান্ত নেন অপেক্ষাকৃত কম গভীর জলে শুটিং-এর| বুক পর্যন্ত জলেই তিনি শুটিং করছিলেন| সেই সময় স্টিভের সামনে এসে পড়ে ছোট আকৃতির একটি স্টিং রে| স্টিং রে-এর ভালো ফুটেজ নেওয়ার জন্য স্টিভ পৌঁছে যান রে-টির মোটামুটি দুই মিটারের মধ্যে| রে-টির সাঁতার কাটার নানা মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দী করার ইচ্ছে ছিল তাঁর|কিন্তু বিপদ বাধে সেখানে|স্টিং রে-টি এসে তার লেজের তীক্ষ্ণ সুঁচের ন্যায় অংশটি দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় স্টিভের বুক| প্রথমে মনে করা হয় শুধুমাত্র ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু পরে তাঁকে নিকটবর্তী চিকিত্সকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন 57 এবং তিনি জানান, সুঁচালো অংশটি স্টিভের হৃদয়কেও ফুঁড়ে দিয়েছে|
কখনো কোনো সরীসৃপ থেকে যিনি ভয় পাননি-সাপ, কুমির, এমনকি নানা নিশাচর প্রাণীর ক্ষেত্রেও যাঁর নির্ভীক রূপ দেখেছে সারা বিশ্ব, সেই বীর সাহসী মানুষের ৫৭ তম জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি|