সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার, আর এই গঙ্গাসাগর মেলার শেষদিন ছিল বুধবার। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার রেশ এখনও কাটেনি। তাই ভাঙ্গা মেলা চলবে এখনও বেশ কিছুদিন। যদি তারমধ্যেই গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ সাফাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে আজ থেকে। আর এই সাফাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং সুজিত বসু। স্বেচ্ছা সেবকদের পাশাপাশি তাঁরাও মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন।
এবারের গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুবই উচ্ছ্বসিত। ধর্মতলার তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান যে, এবারই রেকর্ড ভিড় হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলায়। তিনি জানিয়েছেন যে, এবারে প্রায় ৫৫ লক্ষ মানুষ গঙ্গাসাগরে স্নান করেছেন। কিন্তু কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার কোনও খবর নেই। শুধু তাই নয়, এবারে গঙ্গাসাগরে চল্লিশটি শিশুর জন্ম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, গঙ্গাসাগরে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে মা সন্তান কোলে বাড়ি ফিরছেন, এর থেকে বড় তৃপ্তি আর কী হতে পারে?
মুখ্যমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেছেন যে, গঙ্গাসাগরের বিপুল আয়োজনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তাও রাজ্য সরকার একাই বহন করেছে। পাশাপাশি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এবারের মেলার মূল লক্ষ্যই ছিল পরিচ্ছন্নতা এবং গঙ্গাসাগরে আগত প্রতিটি মানুষের কাছে সঠিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। পাশাপাশি মেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার সংকল্প নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফ থেকে। সেই সংকল্প অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হয়েছে, জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় যে সাফল্য এসেছে, তার জন্য গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীর দল রাজ্য সরকারকে বাহবা দিতেও কার্পণ্য করেননি। মেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে এবার অভিনব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল রাজ্য প্রশাসন, যেমন- লাগাতার প্রচার চালানোর পাশাপাশি ক্রেতা সেজে দোকানদারদের পরখ করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। বিশেষভাবে চায়ের দোকানগুলিতে। কারণ এইসব দোকানগুলোতে নিম্নমানের প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়ে থাকে।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এবারের মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনও খুঁত ধরতে পারেনি। সেদিক থেকে বিচার করলে এমন নির্বিঘ্ন মেলার নজির খুব কম আছে বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
এবারের মেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ৮ জন মন্ত্রী সকাল ও সন্ধেবেলায় মেলার খুঁটিনাটি দিকে খেয়াল রেখেছেন। এমনকী অসুস্থদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরাতে ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, গুরুতর অসুস্থদের এয়ার-অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতায় পাঠানোর কাজে একেবারে অফিসারদের ভূমিকা নিয়েছিলেন অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসুরা।
ভাঙ্গামেলা শেষ হলেই আবার আগামী বছরের জন্য প্রতিক্ষার দিন গোনা শুরু হয়ে যাবে। আবার আগামী বছরে এইভাবেই মানুষের সমাগম ঘটবে। কেউ আসবে তীর্থ করতে, কেওউবা নিছক ঘুরতে, কেউ আবার অজানাকে জানার সন্ধানে।