লড়াইয়ের শুরু হয়েছিল ৫০ বছর আগে। নিউইয়র্কের গ্রিন উইচের খ্রিস্টফার রোডে ১৯৬৯ এ। ‘স্টোনওয়াল ইন’এ। ৫০ বছর আগে ক্রিস্টোফার স্ট্রিটে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত পাঁচ দশক ধরে তা জারি আছে। গত ৫০ বছর ধরে চলে আসা পৃথিবী জুড়ে সমকামী অধিকার লড়াইকে ডুডল আর্টে সম্মান জানাল গুগল।
এলজিবিটি আন্দোলনের ইতিহাসে ‘স্টোনওয়াল রায়ট’ এক ঐতিহাসিক দলিল। নিউইয়র্ক সিটির গ্রিন উইচের খ্রিস্টফার রোডে ‘ স্টোনওয়াল ইন’এ আড্ডা জমাতেন সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষরা। ষাট এর দশকের পর থেকে এই ধরণের গে বার গুলো হয়ে গেল পুলিশি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
১৯৬৯ এর ২৮ জুন বোধ হয় শুরু থেকেই দিনটা অন্যরকম ছিল। প্রত্যেকদিনের মত সেদিনও পুলিশ আসে স্টোনওয়াল ইন-এ। চড়াও হয়। কিন্তু কুঁকড়ে থাকা মানুষগুলো সেদিন আর চুপ চাপ মার খেতে খেতে পুলিশের গাড়িতে গিয়ে উঠে না। স্টোন-ওয়াল-ইন প্রতিরোধ করে। পিছু না হটে তাঁরা পুলিশের আক্রমণের জবাব দেয়। হোটেলের ভিতরে যা কিছু হাতের সামনে ছিল তাই দিয়ে প্রতিরোধ করে। এতদিন প্রভুর মত দাপিয়ে বেড়ানো পুলিশ সেদিন ভয় পেতে শুরু করে কিছু কোনঠাসা মানুষের দুর্নিবার প্রতিবাদকে। একটা সময় পর উপস্থিত সব পুলিশকে রেস্তোরাঁর মধ্যে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
নিপীড়িত মানুষগুলোর রাগ- ঘৃণা এক হয়ে জন্ম নিল পৃথিবীর প্রথম ‘গে মুভমেন্ট’। সেই আন্দোলনের গর্ভেই লুকিয়েছিল আজকের এলজিবিটি আন্দোলনের ভ্রূণ।
ভারতে এলজিবিটি আন্দোলনে ২০১৮-র সেপ্টেম্বর এমনই একটা দিন।
১৮৬১ সালের সমকামিতা বিরোধী ব্রিটিশ আইনটি প্রথমবার বাতিল হয় ২০০৯ সালে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট জানায় সমকাম অপরাধ নয়। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে কিছু ধর্মীয় সংগঠন আদালতে আপিল করলে, ২০১৩ সালে ব্রিটিশ আমলের আইনও পুনর্বহাল করে আদালাত।
কিন্তু রূপান্তরকামী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা নানা রকম শোষণের শিকার হয়ে চলেছেন। তবে শীর্ষ আদালতের রায়ের পর অবস্থা সামান্য হলেও বদলেছে।
আগের মত লুকিয়ে, কুঁকড়ে আর বাঁচতে হয় না প্রান্তিক মানুষগুলোকে। দেওয়াল ভেঙে তাঁরা সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন। প্রতিবাদ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে চলে আসা বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
সারা পৃথিবীর নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা কেমন? ওয়েস্ট বেঙ্গল ফোরাম অফ জেন্ডার এন্ড ইয়ুয়ালিটি মাইনর কলকাতার জেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট পাঞ্চালি কর জানাচ্ছেন,
"৩৭৭ আইন পাশ হওয়ার এই আন্দোলনের বিষয়ের সঙ্গে আরও অনেকগুলো বিষয় যুক্ত হয়ে গিয়েছে। আইনগত দিক থেকে একটা জায়গায় পৌঁছে গেলেও সমাজের গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিশেষ করে যারা ভিজিব্যালি কুয়র। তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাকসেপটেন্স সমস্যা রয়েই গিয়েছে। সেই নিয়ে প্রাইমারি কাজ চলছে।
গ্রাসরুট লেভেলে যারা আছেন তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট সমস্যা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে চেষ্টা চলছে মেইন স্ট্রিমে আনার। জেন্ডার সেনসিটাইজেশণের কাজ করা হচ্ছে। মানুষ এগুলো ভাল ভাবে জানে না। বিভিন্ন কোম্পানি জেন্ডার ভায়োলেন্স সেল তৈরি করছে। কেউ সমস্যায় পড়লে সাহায্য করবে। অনেক সংস্থা তাদের অ্যাডে রেনবো কালার ব্যবহার করছে"। সামাজিক পরিবর্তন-ই সবার আগে কাম্য, তা বলাই বাহুল্য।