মাঝরাত্তিরে হঠাৎ ক্রিং ক্রিং...
বেজে উঠল ল্যান্ডলাইনটা। এত রাত্তিরে কে ফোন করে!
কারও কোনও বিপদ হল না তো?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই রিসিভারখানায় হাত দেন গৃহকর্তা।
ওপ্রান্ত থেকে ঘুম আর অ্যালকোহল জড়ানো কণ্ঠ! পঞ্জাবি মেশা হিন্দিতে বলে উঠল, ‘ আপনি রোলটা আমায় দিতে যাচ্ছিলেন, গল্প পর্যন্ত বললেন, তাহলে ওকে কেন দিলেন হৃষিদা!’
গলাটা ধরম সিং দেওলের। আপনাদের ধর্মেন্দ্র।
গৃহকর্তা হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়।
তৃতীয় ব্যক্তিটি ‘কাকা’ মানে রাজেশ খান্না।
হৃষীকেশ মুখার্জী বললেন, ‘ধরম, এখন শুতে যাও। কাল সকালে আমরা কথা বলব’।
কথা শেষ হতেই কেটে গেল লাইন।
মাঝরাতের এই কাহিনীর সূত্রপাত অবশ্য অনেক আগে।
পরিচালক লাইন কেটে কথা থামিয়ে দিলেও, থামতে রাজী নন অভিমানী ধরম। সারারাত ধরে একটানা বেজে চলল হৃষীকেশ মুখার্জীর বাড়ির ল্যান্ডলাইন।
একবার বেঙ্গুলুরু যাচ্ছিলেন দুজনে একসঙ্গে। ফ্লাইটে যেতে যেতে কথার ফাঁকে ‘আনন্দ’-এর গল্প শুনিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্রকে।
হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের কথা শুনে তিনি ভেবেছিলেন চরিত্রটির জন্য বোধহয় তাঁকেই ভেবেছিলেন পরিচালক।
যখন জানলেন আনন্দ চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত হ্যেছেন কাকা তখন ভীষণ মুষড়ে পড়লেন। তারই ফলশ্রুতি এই ঘটনা।
এই ছবি তৈরির ভাবনা যখন বীজ হিসেবও জন্ম নেয়নি তখন থেকেই ছবি ঘিরে নানা নাটক আর ঘাত প্রতিঘাত।
রাজেশ-অমিতাভ জুটিতে এই ছবি ব্লকব্লাস্টার হিট করলেও তাঁরাই কিন্তু প্রথম পছন্দ ছিলেন না। প্রথমে এই ছবি ভাবা হয়েছিল রাজকাপুর আর উত্তম কুমারকে নিয়ে। সে সময় ছবির নাম ছিল ‘আনন্দ সংবাদ’। পোস্টারও প্রকাশ করা হয় ছবির। যদিও শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়নি। থেকে কিশোরকুমার হয়ে শেষে রাজেশ খান্না।
নামমাত্র পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন তিনি।
ভাস্কর ব্যানার্জী। পেশায় চিকিৎসক। একটি বই লিখেছেন। বইয়ের নাম ‘আনন্দ’। সত্যি ঘটনা নিয়েই তাঁর বইয়ের কাহিনী। তাঁর বন্ধু আনন্দ। কর্কটরোগে প্রাণ হারিয়েছে। রোগী আর চিকিৎসকের সম্পর্ক বদলে গিয়েছিল বন্ধুত্বে। হারানো বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে বই।
ভাস্করের ভূমিকায় অমিতাভ বচ্চন। আনন্দ রাজেশ খান্না। ভালোবাসা বন্ধুত্ব আর জীবনের গল্প। সত্তরের ব্লকব্লাস্টার হিট।স্ক্রিনে একসঙ্গে দু’জন সুপারস্টার। একজন সেই সময়ের সেরা রোমান্টিক হিরো আর একজন আগামীর সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা।
গানে সুর দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরী। কিশোরের বদলে তিনি প্লেব্যাকের জন্য নাম প্রস্তাব করেন মুকেশের। আনন্দ ছবির গান আজও জনপ্রিয়। তাঁর মনে হয়েছিল রাজেশ খান্নার চরিত্রের আবেগ মুকেশের কণ্ঠে অনেক বেশি মানাবে।
‘ আনন্দ মরা নেহি, আনন্দ মরতে নেহি’
হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়কে বাবুমশাই বলে ডাকতেন রাজ কাপুর। ছবি মুক্তির পর দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই ডাক।
‘আনন্দ’ ছবি উৎসর্গ করা হয়েছিল বোম্বাই শহরের প্রতি। এই শহরের জীবনীশক্তি, প্রাণের স্বতঃফূর্ততাকে মনে রেখেই।