সবেমাত্র শুরু হলো একটা নতুন বছর। সবাই নিজের মতো স্বাগত জানাচ্ছে তাকে। ইতিমধ্যেই প্রায় অনেকেই নিয়ে ফেলেছেন নতুন রেজোল্যুশন মানে নতুন বছরের নানা শপথ। তবে এই নতুন বছর নিয়ে উন্মাদনা কিন্তু আজকের নয়। এমন ভাবার কারণও নেই যে, আধুনিক সমাজে এর প্রথম প্রচলন ঘটেছে। এ রীতি বহু বছরের। মানে, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগেও নতুন বছরকে মানুষ স্বাগত জানাত। তাঁদের নানা আচার, প্রথার মাধ্যমে - ইতিহাস তার সাক্ষী। সেই তথ্যই দেব আজ ।
সময়টা আনুমানিক ৪ হাজার বছর আগের। প্রাচীন ব্যাবিলনেই প্রথম শুরু হয় নতুন বছর উদযাপন উৎসব - আকিতু। সুমেরীয় ভাষায় যার অর্থ বার্লি। তবে তাঁদের নতুন বছর ছিল অন্য দিন । ২১ শে মার্চ যেদিন দিন আর রাত সমান হয়ে যায়, তখন থেকেই এখানে নববর্ষের শুরু। আকিতু’র সময়, ব্যাবিলনের রাস্তায় সমস্ত দেবতার শোভাযাত্রা বের হতো। একই সাথে পালিত হত ব্যাবিলনের দেবতা মারডুকের বিজয়োৎসবও।
প্রাচীন রোমানরাও ‘বর্ষবরণ’ কে এক চিত্তাকর্ষক উৎসবের রূপ দিতো। তবে তাদের হিসেব ১২ মাস ও ৩৬৫ দিনের ছিল না। মোট ১০ মাস আর ৩০৪ দিন ছিল একটি বছরে। কিন্তু পরে নানা সমস্যা হওয়ায় জুলিয়াস সিজার ৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চালু করলেন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। যার কেন্দ্রে ছিল সূর্য পঞ্জিকা। এটি রোমান বর্ষপঞ্জীকে ভিত্তি করে প্রবর্তন করা হয়। এ বর্ষপঞ্জি খৃষ্টপূর্ব ৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের রোমান বিজয়ের পর থেকে কার্যকর করা হয়। এটি রোমান সাম্রাজ্য, অধিকাংশ ইউরোপের একটি উদিয়মান ক্যালেন্ডার ছিল । প্রসঙ্গত, এখনকার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের খুব কাছাকাছিই ছিল এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। সিজারই প্রথম পয়লা জানুয়ারি থেকে বছর গোনা শুরু করলেন। রোমান দেবতা জানুস, পরিবর্তনের দেবতা— যাকে উৎসর্গ করা হয় এই প্রথম মাস। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের কিছু সমস্যা হওয়ায় তার সমাধানকল্পেই ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি কর্তৃক গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী রুপে প্রবর্তন করা হয়। এখনকার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের খুব কাছাকাছিই ছিল এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।
তবে এই পয়লা জানুয়ারি থেকে বছর শুরু করাও মধ্যযুগে কিছু সময় বন্ধ করা হয় । পরিবর্তে ২৫ ডিসেম্বরকে করার ভাবনা বলা হয়। বলা ভাল, তা চিরস্থায়ী হয়নি। ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে নতুনভাবে তৈরি করার পর আবার স্বমহিমায় ফিরে আসে পয়লা জানুয়ারি । সেই ঐতিহ্যই পালন করে চলেছে এই অত্যাধুনিক পৃথিবী।