কালী কথা: বেলুন গ্রামের হ্যাপা কালী

হ্যাপা কালী: মা কালী সংকটমোচন করেন, দূর করেন আপদবালাই তাঁর নামেই কি-না হ্যাপা! প্রায় ৩৫৪ বছর ধরে দেবী হ্যাপা কালীর পুজো করে চলছে বেলুন গ্রাম। পুজোর শাড়ি, গামছা থেকে ধূপ, ধুনো, গঙ্গাজল, আলতা সিঁদুর, ফল-মূল থেকে মিষ্টান্ন, পুজোর সব সামগ্রীই নিলাম হয়। সেই নিলামের টাকায় হয় পুজোর আয়োজন। বছরভর পুজো চলে। আগামী বছরের পুজোর আয়োজন হয় নিলাম থেকে উপার্জিত অর্থে। গ্রামাবাসীদের মতে মোঘল আমলে হ্যাপা কালীর পুজো শুরু হয়েছিল। নির্দিষ্ট করে দিনক্ষণ জানা নেই কারও। প্রথমে বকুল গাছের তলায় পুজো হলেও পরে কাঁচা মন্দির হয়। পাকা মন্দিরেই এখন দেবীর পুজো হয়।

বছরের পর বছর ধরে এভাবেই পাণ্ডুয়ার বেলুন গ্রামে হ্যাপা কালীর পুজো হয়ে আসছে। পুজোর জন্য কারও থেকে কোনও রকম চাঁদা নেওয়া হয় না। দীপান্বিতা কালীপুজোর পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে পুজোয় পাওয়া সব সামগ্রী নিলাম করা হয়। তা দিয়েই পুজোর ব্যয়ভার বহন করা হয়। এক সময়ে কাপড় সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপের বাঁশ পর্যন্ত নিলাম হত। কিন্তু এখন ডেকরেটারকে দিয়ে মণ্ডপ করানো হয়। তাই সেই সুযোগ নেই। কিন্তু বেনারসি থেকে ছাপা শাড়ি,গামছা, ফল, ধূপ, সন্দেশ, বলির ছাগ-সহ পুজোর সমস্ত উপকরণ নিলাম হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেও আসেন বহু মানুষ। দর হেঁকে মায়ের সামগ্রী কেনেন ভক্তরা। তাঁদের বিশ্বাস, এতে পূণ্য লাভ হয়।

কথিত আছে, মা কালীকে প্রতিষ্ঠা করতে বহু হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল। সে'কারণেই দেবীর নাম হয়েছে হ্যাপা কালী। পাণ্ডুয়ার বেলুন ধামাসিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলুন গ্রামে এই হ্যাপা কালীর পুজো হয় প্রায় সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি সময় যাবৎ। তন্ত্রমতে দেবীর পুজো হয়। কার্তিক মাসে অমাবস্যার রাতে পুজোর সময় ছাগ বলি হয়। পুজোয় প্রায় ৫০ টির বেশি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো পুজোতে আজও রীতি মনে হয় নিলাম। আদপে দেবী হ্যাপা কালী হলেন ডাকাত কালী, বঙ্গের ডাকাতদের আরাধ্যা দেবী।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, বেলুনগ্রামের বাগদিপাড়ার কয়েকজন ডাকাতের হাতে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। মা কালীর পুজো দিয়ে তাঁরা ডাকাতি করতে যেতেন। পুজোয় ব্যবহৃত সামগ্রী নিলামে ওঠে, তা নিতে ভিড় জমান পার্শ্ববর্তী দশ বারোটি গ্রামের মানুষ। ভক্তরা পুজোয় যা কিছু দেন সবই নিলামে ওঠে। যিনি বেশি দাম দেন, তিনিই জিনিস কেনেন। হ্যাপা কালী তলায় নিলামে কেনা জিনিস থেকে পুণ্যলাভ হয় বলে বিশ্বাস ভক্তদের। তাই বেশি দামে জিনিস কিনে নিতে দ্বিধা বোধ করেন না গ্রামবাসীরা।

এক সময় শুকনো পাতার ছাউনির ঘর ছিল, সেখানেই পুজো হত। বর্তমানে পাথর বসানো স্থায়ী মন্দির তৈরি হয়েছে। কালের নিয়মে একাধিকবার পুজোর আয়োজক, উদ্যোক্তা বদল হয়েছে। হাতে ঘুরে অন্য হাতে দায়িত্ব এসেছে। ছাগ বলি, ধুনুচি পোড়ানো, বুক চিরে রক্তদান, এমন কত প্রথা পালিত হয় পুজোয়। প্রায় তিনশো বছরের বেশি সময় যাবৎ অটুট রয়েছে এই পুজোর রীতি ও আচার।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...