নতুন গুড় আর নতুন চালের গন্ধে দরজায় পৌষ উৎসব। বাঙালির হেঁশেলে লেগেছে পৌষের ডাক। পিঠে-পুলি-পায়েসে মকর সংক্রান্তি উদযাপনে মেতে উঠবে মানুষ। দুই বাংলার ঐতিহ্য পিঠে। দুই বাংলার হেঁশেলই পিঠের স্বাদে বৈচিত্র্যময়। কারও কাছে পিঠে, কারও কাছে পিঠা।
নতুন ধানের চালে থাকে সুমিষ্ট গন্ধ আর আর্দ্রতা। ধান যত পুরোনো হয়, ততই তার আর্দ্রতা হারায়। পুরোনো চালের গুঁড়োতে তৈরি পিঠে সুস্বাদু হয় না। তবে, ভেজা চালের গুঁড়া ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করে পিঠের স্বাদ অক্ষুণ্ন রাখা যায়। এই নিবন্ধে দুই বাংলার কয়েকটি বিখ্যাত পিঠের রেসিপি দেওয়া হল
চিতই পিঠে
কী কী লাগবে
কুসুম গরম জল- প্রয়োজনমতো
আতপ চালের গুঁড়ো- ৪ কাপ
নুন- স্বাদ অনুসারে
কীভাবে করবেন
চালের গুঁড়ো ভালো করে নুন ও জল দিয়ে মেখে রাখুন। ২০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। ঢাকনা খুলে আবারও জল দিয়ে ভালো করে মাখান। প্রয়োজন হলে আরও জল যোগ করুন। গোলার ঘনত্ব একটু পাতলা হতে হবে। আরও কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। কড়াইতে তেল ব্রাশ করে নিন। কড়াইটা অনেকক্ষণ গরম রাখুন। গোলা কড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ২-৩ মিনিট ঢেকে দিন। পিঠেফুলে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। খেজুর বা নলেন গুড় বা চাটনি দিয়ে পরিবেষন করতে পারেন
ভাপা পিঠে
কী কী লাগবে
সেদ্ধ চালের গুঁড়ো- ৪ কাপ
নারকেল কোরা- আধ কাপ
খেজুরের গুড়- ৩০০-৪০০ গ্রাম
গরম জল- আধ কাপ
নুন- স্বাদ অনুসারে
কীভাবে করবেন
সেদ্ধ চালের গুঁড়ো মিহি চালনিতে চেলে নিতে হবে। চালের গুঁড়োতে জল এমন আন্দাজে ছিটাতে হবে, যেন ভেজা মনে হয়; অথচ দলা না বাঁধে। নুন দিন। জল মেশানোর পর চালগুঁড়ো আবার চেলে নিতে হবে। একটি বড় হাঁড়ির মুখে পাতলা কাপড় বেঁধে নিতে হবে। হাঁড়িতে জল দিয়ে ওভেনে বসান। ওপরে মাপমতো ঢাকনা দিয়ে দিন। পিঠের জন্য দুটি ছোট ছোট বাটি নিতে হবে। একটি বাটিতে অল্প পরিমাণে করে গুঁড়ো দিন। মধ্যে কিছু নারকেল ও গুড় দিতে হবে। আবার চালের গুঁড়ো দিয়ে সমান করে দিন। পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে পিঠার বাটিটি ঢেকে দিন। বাটিটি কাপড়সহ উল্টে নিন। ফুটন্ত জলের ওপর রাখা ঢাকনার ওপর বসাতে হবে। বাটি তুলে ফেলুন আস্তে করে। কাপড় দিয়ে পিঠে ঢেকে ওপরে ঢাকনা দিয়ে দিন। দুই থেকে তিন মিনিট পর ঢাকনা সরিয়ে ফেলুন। মাঝের সময়টিতে ছোট আরেকটি বাটি তৈরি করে রাখতে পারেন গুড় আর চালগুঁড়ো দিয়ে। এবার কাপড়সহ পিঠে তুলে নিন।
পোয়া পিঠে
কী কী লাগবে
চালের গুঁড়ো- ৩ কাপ
ময়দা- আধ কাপ
খেজুরের গুড়- দেড় কাপ
নুন- ১ চিমটি
জল- ২ কাপ
ভাজার জন্য- সয়াবিন তেল পরিমাণমতো
কীভাবে করবেন
চালের গুঁড়ো, ময়দা আর নুন একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর একটা পাত্রে জল ও গুড় ওভেনে বসিয়ে গলিয়ে নিতে হবে। এই গলানো গুড়ের সঙ্গে চাল-ময়দার মিশ্রণ তৈরি করে ১০–১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। খেয়াল রাখুন মিশ্রণ যেন পাতলা না হয়। তাহলে পিঠে ভালো হবে না। এরপর একটা লোহার কড়াই বা ননস্টিক প্যানে বেশি করে তেল গরম করে তাতে ডালের গোল চামচের এক চামচ মিশ্রণ দিয়ে মাঝারি আঁচে লালচে করে দুই পিঠ ভেজে তুলুন।
মুগ সামলি
কী কী লাগবে
মুগ ডাল- ২৫০ গ্রাম ভাজা
নারকেল কোরা- ২ কাপ
ময়দা- ১ কাপ
চিনি- ৭৫০ গ্রাম
নুন- স্বাদ মতো
ভাজার জন্য তেল
কীভাবে করবেন
প্রথমে মুগ ডাল সেদ্ধ করে বেটে নিন। এবার ৩৭৫ গ্রাম চিনিতে ৩/৪ কাপ জল দিয়ে রস তৈরি করুন। তারপর একটি কড়াইয়ে নারকেল ও বাকি চিনি মিশিয়ে ভালোভাবে জ্বাল দিতে থাকুন। ঘন ও আঠালো হয়ে এলে কড়াইটি গ্যাস ওভেন থেকে নামিয়ে নিন।
এরপর ময়দায় ২ টেবিল চামচ তেলের ময়ান, প্রয়োজন মতো জল ও সেদ্ধ মুগ ডাল বাটা দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। এবার মুগডাল ও ময়দা মাখায় নারকেলের পুর ভরে মুখ বন্ধ করে দিন। ডুবো তেলে ভেজে চিনির রসে চুবিয়ে পরিবেশন করুন মুগ সামলি।