হিংসা নয়, শান্তিই মুক্তির একমাত্র পথ। মহাত্মা গান্ধীর এই মতাদর্শকে সামনে রেখে তাঁর সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ নিলো রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। ঠিক হয়েছে রাজ্যের সমস্ত ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরের স্কুল, কলেজে সাড়ম্বরে উদযাপিত হবে মহাত্মা গান্ধীজির সার্ধশতবর্ষ। এই মর্মে শিক্ষা দপ্তর একটি নির্দেশিকাও জারি করেছে। আগামী ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীজির জন্মদিন। সেদিন থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে মহাত্মার সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান। চলবে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত। রাজ্য সরকার চাইছে, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস মতাদর্শ রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে আরও স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে। এর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০ বছর পূর্তিতে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর রাজ্য জুড়ে মহাসমারোহে নানান অনুষ্ঠান করেছে। এই জন্য ২০ কোটি টাকা খরচ করেছিল রাজ্য সরকার। মহাত্মা গান্ধীজির সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের জন্যও ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরে একটি বড় বাজেট ধরে এগোচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর।
রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অহিংসা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বুনিয়াদি শিক্ষা-এই বিষয়ে গান্ধীজির সারা জীবনের অবদানের উপর ভিত্তি করে কিছু অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হবে। যা ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরের স্কুল, কলেজগুলিতে অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য ব্লকস্তরে ২ কোটি টাকা ও জেলাস্তরে মাথাপিছু ২৩ লক্ষ টাকা করে আপাতত খরচ হবে বলে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
ইতিমধ্যেই আগামী ২ অক্টোবর রাজ্যের স্কুল, কলেজগুলিতে গান্ধীজির সার্ধশত জন্মদিবস সাড়ম্বরে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে। প্রাথমিকভাবে ব্লকস্তর, জেলাস্তরে ২ অক্টোবর থেকে গান্ধীজির মত ও পথের উপর ভিত্তি করে প্রবন্ধ, নাটক, বিতর্ক ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে। ব্লক ও জেলাস্তর প্রথমে এই প্রতিযোগিতা হবে। তারপর স্কুল ও কলেজপিছু প্রতিযোগিতায় প্রথম তিনজন সফল প্রতিযোগী ব্লকস্তর থেকে জেলাস্তর, তারপর জেলাস্তর থেকে একই ভাবে তিনজন সফল প্রতিযোগী রাজ্যস্তরে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। এরপর রাজ্যস্তরে হবে বিভিন্ন বিষয়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা থেকে প্রবন্ধ, নাটক, বিতর্ক - এই তিন বিষয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রতিযোগী নির্বাচন করা হবে। কলকাতায় কোনো বড় স্টেডিয়ামে রাজ্যস্তরের সফল প্রতিযোগীদের পুরস্কৃত করা হবে। এই অনুষ্ঠানটি ২০২০ সালের ২ অক্টোবর হতে পারে বলে শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সফল প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন বলে শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
রাজ্য সরকার রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নজরুলের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই নানান অনুষ্ঠান করে। বিবেকানন্দ-র জন্মদিনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যুব উৎসব হয়। সেখানেও ব্লক, জেলা ও চূড়ান্তভাবে রাজ্যস্তরে প্রবন্ধ, নাটক, গান ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়। গত বছর বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান বছরভর উদযাপন করেছিল রাজ্য সরকার। এর পর এই বছর মহাত্মা গান্ধীজির সার্ধশতবর্ষ পূর্তির অনুষ্টান সাড়ম্বরে বছরভর উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিলো রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। রাজ্য সরকার চাইছে, আমাদের রাজ্যের মনীষীদের মতাদর্শ রাজ্যের সমস্ত ছাত্র,ছাত্রীদের মধ্যে আরও বেশি করে তুলে ধরতে। লক্ষ্য একটাই, একটা অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তোলা।