টিভির পর্দায় গান গাইছে এক মেয়ে। গলায় বিদ্যুৎ কিন্তু জলের মতো স্থির। নিজের সময়ের থেকে অনেকটা অন্যরকম। গলার টানে মুগ্ধ হতে হয়। অথচ তার সহজ ভাবটা কাছে টানে।
এমন মেয়ের গানে মোহিত হয়েছিলেন লীলা বনশালী। সঞ্জয় লীলা বনশালীর মা।
সঞ্জয় তখন তাঁর সিনেমায় প্লেব্যাকের জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন। টেলিভিশনে শোনা মেয়েটির কথা তাঁকে ছেলেকে বললেন লীলা বনশালী। মেয়েটার নাম শ্রেয়া। শ্রেয়া ঘোষাল।
‘দেবদাস’ ছবি দিয়ে বলিউডে প্রবেশ। "সিলসিলা ইয়ে চাহত কা", "ব্যায়রি পিয়া", "চলক চলক", "মোরে পিয়া" আর "ডোলা রে ডোলা"। পাঁচটা গান পেয়েছিলেন ছবিতে। উদিত নারায়ণ, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, বিনোদ রাঠোরদের মতো বাঘা বাঘা শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ দিলেন ষোড়শী শ্রেয়া। ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা সামনেই। এদিকে চলছে ছবির জন্য গান রেকর্ডিং। স্টুডিয়োতেই বইপত্র-নোটস নিয়ে চলে আসতেন।
দেশে সাড়া ফেলেছিল "ব্যায়রি পিয়া"। সেই গানের জন্যই প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সেরা নারী কণ্ঠ হিসেবে।
২৫ বছর পার করতে না করতেই বাড়ির আলমারিতে ফিল্মফেয়ার থেকে শুরু করে প্রায় সব বড় পুরস্কার। শুধু হিন্দি নয়, বাংলা, তামিল,মালায়লাম- ১২ টির-ও বেশি আঞ্চলিক ভাষায়। কোনও জঁর-এ বাঁধা পড়েননি। ক্ল্যাসিকাল থেকে শুরু করে ভজন, গজল, ফিল্মি, পপ- সব ধরনের গানেই তুখোড় শ্রেয়া।
সাফল্য এমনি আসেনি। কঠোর-কঠিন পরিশ্রম আর নিষ্ঠা তাঁর চোখ ধাঁধানো সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। ছোটবেলা থেকে গান ছাড়া আর কিছু জানতেন না। আজও গান ‘ফার্স্ট প্রায়োরিটি’। শ্রেয়া মানেই সম্মোহন।
বয়স যখন মাত্র ১৪, রিয়েলিটি শোতে বিজয়ী হন। ১৬ বছরে প্রথম প্লে-ব্যাক। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করতেন কিন্তু নিজেকে ভেঙেছেন বারবার। সব ধরনের গানই তাই হয়ে ওঠে ‘তাঁর’ গান।
কার কাছে গান জীবনের শুরু শ্রেয়ার?
উত্তর একটাই মায়ের কাছে। মা তাঁর প্রথম গুরু। মা তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচক।
শ্রেয়া এই প্রজন্মের তো বটেই আগামী প্রজন্মেরও অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী। একা লীলা বনশালী নন, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে মান্না দে সকলেই তাঁকে আগামীর শিল্পী এবং যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ।
ব্রিটেন তাঁর কণ্ঠকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছে। ওহাইও’র গভর্নর ২০১০ সালের ২৬ জুন দিনটি শ্রেয়া ঘোষাল ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে দিল্লিতে মাদাম তুসো মিউজিয়ামে শ্রেয়ার মোম মূর্তি স্থাপন করা হয়।
১৯৮৪’র ১২ মার্চ মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্ম হয় এই নক্ষত্রের। হিন্দি, মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও ওড়িয়া, অহমিয়া, ভোজপুরী, গুজরাটি, মারাঠি, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালায়ালাম, নেপালী মিলিয়ে ১২ টি আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়েছেন এখনও পর্যন্ত।
শ্রেয়ার সুরে স্নিগ্ধ হয় পৃথিবী। সেখানে কোনও ভাষার ব্যবধান নেই। ব্যবধান তিনি হারিয়েছেন সুরে সুরে।