পাহাড়ের মতো উঁচু। করাতের মতো ধারালো দাঁত। ভাঁটার মতো চোখ। চোখের মণি থেকে ঠিকরে আসে আগুন। দশ বাঘের হুঙ্কারে সে ঘুরে বেড়ায়। সামনে মানুষ পড়লে আর রক্ষে নেই। কড়মড়িয়ে চিবিয়ে খাবে। এমন হাড়হিম প্রাণীদের দুষ্টুমি আর দৌরাত্মে মজেছিল গোটা নব্বই দশক। নাম তাদের ডাইনোসোর।
প্রথম দেখা ১৯৯৩তে। স্টিফেন স্পিলবার্গের প্রিয় সেনারা মন জয় করে নিয়েছিল গোটা পৃথিবীর। পৃথিবী জুড়ে ডাইনো-জ্বর। সেই জ্বর ছড়িয়ে পড়েছিল কলকাতাতেও।
সিনেমা হলের পর্দা থেকে একেবারে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ইস্কুল-কলেজ সর্বত্র। জামাকাপড় থেকে রবার পেন্সিল সর্বত্র ঘুরে বেড়ায় ‘ভয়াবহ সরীসৃপ’রা।
তবে কলকাতার মানুষরা বোধহয় একটু বেশিই ভালবেসেছিল প্রায় ৭ কোটি বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এই প্রাণীদের। তাই গঙ্গাতীরের ৩০০ বছরের পুরনো শহরে ফিরিয়ে এনেছিল তাদের। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে সায়েন্স সিটিতে।
১৯৯৬-এর এক সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজ্যবাসীর চোখ টেনে নিয়েছিল খবরের কাগজের প্রথম পাতা। ইয়া বড় মুখ-হাঁ এক ডাইনোসোর। দেখলেই পিলে চমকে যায়!
এশিয়ার বৃহত্তম সায়েন্স সেন্টার কলকাতার বিজ্ঞান নগরী হয়ে উঠেছিল গোটা দেশের আকর্ষণ। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস, পরমা আইল্যান্ড, ক্রসিং-এর ধারে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধানে।
১৯৯৪ সালে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ৪৯.০৬ একর জমি দেয় বিজ্ঞান নগরী গড়ে তোলার জন্য। পরবর্তী ২ বছরে গড়ে ওঠে কনভেনসন সেন্টার ও কমপ্লেক্সের বাকি অংশ। ১৯৯৬ সালে কনভেসশন সেন্টার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ও নোবেলজয়ী রসায়নবিদ Paul Jozef Crutzen। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরাল এবং রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
বিজ্ঞান নগরীতে অন্য সব কিছুর মধ্যে ডাইনোসোর পার্কের আকর্ষণ সর্বাধিক। নব্বইয়ের দশকে এই জাদুঘরে একবার ডাইনোসরের বিশেষ শো হয়েছিল। উপচে পড়েছিল ভিড়।
সাধারণ দর্শক তো বটেই ছাত্রছাত্রীদের কাছে একসময় অবশ্য গন্তব্য ছিল সায়েন্স সিটি। খবরের কাগজের শেষ পাতায় আসত বিজ্ঞাপন। নিত্যনতুন চমক সেখানে। আছে গোলক ধাঁধার আয়নামহল। বিদ্যুতের গোলক স্পর্শ করলেই খাড়া হয়ে যাবে মাথার চুল। টাইম মেশিনে ফিরে যাওয়া যাবে পুরনো সময়ে। সেই সফর চলছেই।
আজও ফি বছর শীতের ছুটি পড়লে বাঙালির গন্তব্য হয়ে ওঠে বিজ্ঞান নগরী। এই ২৫ বছরের যাত্রায় সে আজ হয়ে উঠেছে আরও ঝকঝকে। রজতজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে নতুনভাবে নতুন চেহারায়। আছে সূর্যঘড়ি। এই ৫০ ফুটের ব্যাসার্ধের ঘড়িটিতে শুধু সময়ই নয়, জানা যাবে পৃথিবী ও সূর্যের সঙ্গে সময়ের সংযোগ স্থাপনের সময়ও।