তেইশে জানুয়ারি মানেই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস -এর জন্মদিন। কিন্তু তার সঙ্গে তেলেভাজার কি কোনো সম্পর্ক আছে? সেটা জানতে গেলে উত্তর কলকাতার একটি তেলেভাজার দোকানের ইতিহাস জানতে হবে। স্বয়ং নেতাজি জড়িয়ে রয়েছেন এই ইতিহাসে। ১৫৮ নম্বর বিধান সরনীর বিখ্যাত এই তেলেভাজা দোকানের নাম লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স। নেতাজির জন্মদিনে এই দোকানেই, সকাল থেকে শুরু হয় বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ। কারণ নেতাজিকে ঘিরেই।
সকাল থেকেই হাজার হাজার তেলেভাজায় উনুন জ্বলে ওঠে উত্তর কলকতার এই চপ-মুড়ির দোকানে। জানা গেল, একদা লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স-এর পূর্ব প্রতিষ্ঠাতা দাদু কেদু সাউ চপ-মুড়ি পাঠানোর অর্ডার পেয়েছিলেন নেতাজির কাছেই। স্বদেশী মিটিং এর সময় তখন এই চপ মুড়ি খেয়েছিলেন নেতাজি। বর্তমান কর্তার কেডা সাউ এর নাতি জানান পরবর্তীতে দাদুই নির্দেশ দিয়েছিলেন নেতাজির জন্মদিনে তেলেভাজা কিনতে এলে সেটা যেন আজকের দিনে বিনামূল্যেই বিতরণ করা হয়। বিতরণের সংখ্যাও বেশ মজার। পরিবারের ছোটদের জন্য বরাদ্দ থাকে দুটি তেলেভাজা আর বড়দের জন্য বরাদ্দ থাকে চারটে করে তেলেভাজা। তেলেভাজার ভিতর রয়েছে নানা বাহারি চপের সম্ভার। পেঁয়াজি, ফুলুরি, বেগুনি, ফুলকপির চপ, আলুর চপ প্রভৃতি।
বাঙালির সান্ধ্য ভোজন হোক বা মিটিংএর টেবিল, তেলে ভাজা চপ মুড়ির জনপ্রিয়তা ছিল অবশ্যম্ভাবী। সেই জোয়ারে এখনকার ফিশ ফ্রাই আর চাউমিন অনেকটাই জায়গা করে নিয়েছে বলে আফসোস জানান এখনকার তেলেভাজার দোকানের কর্ণধার বাঙালি বাড়ির অতিথি আপ্যায়ন থেকে তেলেভাজা প্রায় উঠেই গেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা হোক বা হাতের মুঠোয় খাবারের অর্ডার দেওয়ার মাধ্যমগুলোর দৌলতে চপ-মুড়ি ক্রমেই বাঙালির নস্টালজিয়ায় ঢুকে যাচ্ছে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু পথের পাশে এখনো তেলেভাজার সম্ভার দেখে সবসময় লোভ সম্বরণ করা যায় কী?