‘সকলেই সমান, সকলের সমান অধিকার’ –এ কথা এখনও প্রযোজ্য হয়ে ওঠেনি সমাজের কাছে। তাই এখনও সমাজ আড়চোখে কোণঠাসা করে রাখে তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরকামীদের। তবে সমাজের এই দুর্ভেদ্য অন্ধকারের ভিতর থেকেই কখনও কখনও ঠিকরে বেরিয়ে আসে আলো, সেই সব আলোই দেখায় পথ। সেরকমই একজন আলোর নাম অ্যাডাম হ্যারি। ভারত স্বাগত জানাতে চলেছে দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার এয়ারলাইন পাইলটকে। শুধু তাই নয়, তাকে সমস্তরকমভাবে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কেরালা সরকার।
কেরালার ত্রিশূল জেলার বাসিন্দা হ্যারি। ২০১৭ সালে জোহানসবার্গে এয়ারলাইন-এর ট্রেনিং-এ যান। তারপরই হাতে পান প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স। সমাজ দূরে থাক, সন্তান ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ মেনে নিতে পারেনি তাঁর নিজের পরিবারই। একটা সময় বাড়ির লোকেরা তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও চালায় এবং শেষপর্যন্ত বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এক নিমেষে ভেঙে যায় হ্যারির ইচ্ছে উড়ানের স্বপ্ন। পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে সে সরকারি সাহায্যের জন্য অনুরোধ করে।
তাঁর কথায়, পরিবার তাঁকে মেনে না নেওয়ায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছাড়তে হতে পারে, এই আশঙ্কায় পাগল অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য কোথাও ভর্তিও হতে পারবে না টাকার অভাবে, সেই ভয়ও তাঁকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়াত।
অবশেষে তাঁর অদম্য ইচ্ছেই তাঁর কাছে এনে দেয় ইতিহাসিক সাফল্য। হ্যারির পাশে দাঁড়ায় কেরালা সরকার। ২০ বছরের হ্যারির ৩ বছরের পাইলট হওয়ার কোর্স ও ট্রেনিংয়ের গোটা খরচটাই বহন করবে এই রাজ্য সরকার। স্থানীয় আদালতের নির্দেশ মতো, থিরুভানানথাপুরমের রাজীব গান্ধী একাদেমি টেকনোলজিতে ৩ বছরের কোর্সের জন্য মোট ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করবে কেরালা সরকার। শুধু তাই নয়, কমার্শিয়াল পাইলটের লাইসেন্সেরও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।