চাপ, চাহিদা, টেনশন, স্ট্রেস যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসিক সমস্যা। বিশ্বের সব মানসিক স্বাস্হ্যের সংকটের ছবিটা এক। কিছুটা যেন উত্তর আধুনিক জীবন যাত্রার অনিবার্য অসুখ হিসেবেই ছড়িয়ে পড়ছে ডিপ্রেশন। জীবনের গতি যত বাড়ছে তত বাড়ছে হতাশা আর জটিলতা। কিন্তু অবসাদ বা ডিপ্রেশনের জন্য শুধু কি জীবন যাত্রা আর অস্থির জীবনের চাপ দায়ী নাকি অন্য কোনো কারণও অনুঘটকের কাজ করে?
বহুদিন ধরেই গবেষকরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন। মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার, এমডিডি-এর সঙ্গে মানব দেহের জিনের সম্পর্ক নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে। কিন্তু গবেষকদের একটা বড় অংশ অবসাদের কারণ হিসেবে জিনের প্রচ্ছন্ন মদতকেও বিষয়িভূত করতে চেয়েছেন।
সম্প্রতি নেচার জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে বিজ্ঞানীরা ১৭ টি জেনেটিক্স কারসাজির কথা উল্লেখ করেছেন। যা ‘স্পিপস’ নামে পরিচিত। ‘স্পিপস’ এমডিডি এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ১৩- এনডমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত জেনোমিক্স তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বহু বছর ধরে অবসাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো জিনের সম্পর্কের সন্ধান করছেন গবেষকরা।
২০১৩ সালে ‘ দ্য ল্যানসেট’ জার্নালে এবং ২০১৫ সালের ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত দুটি গবেষণা পত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল।
সম্প্রতি এল্যা ওজসিকি জানান আমরা মানুষের জেনোম কে আরও বেশি করে বুঝতে এবং তার নানা দিক নিয়ে বহু দিন ধরে গবেষণা করে চলেছি। আমাদের কাছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের জেনেটিক তথ্য রয়েছে। অনেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন নিজের নিজের জিনকে চিনতে। জানতে। বুঝতে চাইছেন নিজস্ব প্রকৃতির মধ্যে বংশগতির লক্ষণগুলো কতটা প্রকট বা প্রচ্ছন্ন । এটি একদিকে যেমন বিজ্ঞান সচেতনতার সাফল্য হিসেবে আমরা মনে করতে পারি তেমনি এই প্রবণতা বেশ ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
মানসিক রোগ মূলত জেনেটিক্সের জটিল কার্যক্রম। মানুষের পরিবেশ এবং আচরণগত কারণের মিশ্রণ। বিপুল সংখ্যক মানুষের ওপর তা কাজ করে।
নতুন গবেষণায় ৭৫ হাজার ৬০০ মানুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এরা সবাই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত। এছাড়া ২ লক্ষ ৩১ হাজার মানুষের অবসাদের ইতিহাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এমডিডি সমস্যার সঙ্গে মানুষের ডি এনএ-র ১৫ টি অংশের যোগ খুঁজে পেয়েছেন। মানসিক অবসাদের জন্য ডিএনএর এই অংশগুলির ভূমিকা নিয়ে তাঁদের আগেও সন্দেহ ছিল।
তবে মনে করা হচ্ছে এখনও পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
গবেষকরা সেই সমস্ত মানুষদের তথ্যই এখনো পর্যন্ত পেয়েছেন, যাঁরা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে নিজেদের জেনেটিক রিপোর্ট পেতে আগ্রহী। কিন্তু সেই পরিসরের বাইরের অসংখ্য মানুষ রয়েছেন যাঁরা এমডিডি তে আক্রান্ত।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সাইক্রিয়াট্রির প্রফেসর জোনাথন ফলিত এ প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন, ‘মানসিক রোগের সঙ্গে জিনের সম্পর্ক জানা গেল অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে। ডিপ্রেশন বা আলঝাইমার্স এর মতো রোগ ক্যান্সারের চেয়ে কোনো অংশে কম মারাত্মক নয়’।
গবেষকদের ভাষায়, ঠিক কীভাবে মনে অসুখ বাসা বাঁধে তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝে ওঠা কঠিন। অসুখ কারুর দোষের কারণ নয়। কিন্তু এগুলো যে রোগ এবং তার যে শুশ্রুষার প্রয়োজন তা মানুষকে মনে রাখতে হবে’।