শতবর্ষে এ টি কানন

পঞ্চাশ- ষাট দশক বুঁদ হয়েছিল এক শিল্পীর খেয়ালের যাদুতে। শুধু মাত্র নিজের কণ্ঠের যাদুতে মোহিত করেননি শ্রোতাদের, তিনি তৈরি করেছিলেন বহু সুযোগ্য ছাত্র-ছাত্রী। তাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন ভারতীয় সঙ্গীতকে। সঙ্গীতসাধক এ টি কানন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের জন্ম শতবার্ষিকীর বছর ২০২০।
১৯২০ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই জুন মাদ্রাজে তাঁর জন্ম। জন্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতীয় হলেও খুব কম বয়স থেকেই তাঁর মন জুড়ে ছিল উত্তর ভারতীয় রাগসঙ্গীতের সাথে চলছিল পুরোদমে ক্রিকেট খেলা, খেলার সূত্রেই চাকরি পেলেন রেল এ,সঙ্গে সঙ্গে চলছিল গানবাজনাও, রেডিও অডিশনেও সুযোগ পেলেন। পরবর্তীকালে চাকরী সূত্রে চলে আসেন কলকাতায়, এবং পাকাপাকি ভাবে থেকে এখানেই থেকে যান শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কে ভালোবেসে।
তালিম নিয়েছিলেন কলকাতায় আচার্য্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে। পরবর্তীকালে ওস্তাদ আমির খাঁ সাহেবের থেকেও সঙ্গীত শিক্ষা করেছিলেন। শুধু একজন কুশলী শিল্পী হিসেবে নয়, কলকাতা তাকে মনে রাখবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিস্তারে তার নিরলস প্রয়াসের জন্য।
কলকাতা সহ দেশের তৎকালীন প্রায় সব প্রধান শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কনসার্টগুলির অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি এবং তাঁর সুযোগ্যা সহধর্মিণী আরেক দিকপাল সঙ্গীত সাধিকা বিদূষী মালবিকা কানন পরম মমতায় সন্তান স্নেহে লালন করেছেন অজস্র ছাত্রছাত্রী, ছড়িয়ে দিয়েছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অমৃত নিরলসভাবে।অকাতরে সাহায্য করেছেন সকলের প্রয়োজনে। পণ্ডিত এ টি কানন ও বিদূষী মালবিকা কানন এর সঙ্গীতআদর্শের সার্থক উত্তরসূরী তাঁদের প্রিয় শিষ্য শ্রী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বয়ে নিয়ে চলেছেন কিরানা ঘরানার সুর গুরুর দেখানো পথে, এবং দেশে ও বিদেশে সফলভাবে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন ভারতীয় রাগসঙ্গীত। ২০০৭ সালে পণ্ডিত এ টি কানন এর স্মৃতিতে এবং বিদূষী মালবিকা কাননের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে শ্রী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় তত্ত্বাবধানে "সুরমূর্চ্ছনা" নামে একটি সঙ্গীত সংস্থার জন্ম হয়। প্রসঙ্গত এই নামটিও বিদূষী মালবিকা কাননের দেওয়া।
জন্মলগ্ন থেকেই "সুরমূর্চ্ছনা" শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে উদ্যোগ নিয়ে চলেছে, রাগসঙ্গীত শিক্ষার পাশাপাশি নিয়মিত শহর ও শহরতলীতে ওয়ার্কশপ, অনুষ্ঠান আয়োজন করার সঙ্গে সঙ্গেই সঙ্গীত প্রতিভা সম্পন্ন দুঃস্থ নবীন প্রতিভার বিকাশে উদ্যোগ নিয়েছে।পণ্ডিত এ টি কাননের স্মৃতিতে এবং পরবর্তীতে বিদূষী মালবিকা কাননের স্মৃতিতে "সুরমূর্চ্ছনা" এযাবৎকালে অজস্র মিউজিক কনসার্ট আয়োজন করেছে সুনামের সঙ্গে এবং অত্যন্ত সফলভাবে। ২০১৭ সালে "সুরমূর্চ্ছনা"-র মুকুটে একটি নতুন পালক যুক্ত হয়, এই বছর আমেরিকায় এই সংস্থার শাখা যাত্রা শুরু করে।ফলত, কলকাতা এবং আমেরিকা, দু’জায়গাতেই একাধিক ওয়ার্কশপ, মাস্টার ক্লাস ও কনসার্টের আয়োজন করে চলেছে এই সংস্থাটি।
পণ্ডিত এ টি কাননের জন্মশতবর্ষের উদযাপন অনুষ্ঠানটি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা মহামারীর জন্য বছরব্যাপী উদযাপনের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন করতে হয়। বর্তমানে সমস্ত ওয়ার্কশপ ও কনসার্টগুলি অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে কলকাতা ও আমেরিকা,দুজায়গা থেকেই। সংস্থার শিক্ষার্থীরা ছাড়াও নবীন ও প্রবীণ প্রজন্মের গুণী শিল্পীদের অনুষ্ঠানে দর্শক শ্রোতারাও খুশি। এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই দুঃসময়ে "সুরমূর্চ্ছনা" সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের দিকে। যে সব সঙ্গীতশিল্পীরা এই সময়ে আর্থিক অসুবিধায় পড়েছেন, তাদের জন্য এই অনলাইন অনুষ্ঠানের থেকে প্রাপ্ত অর্থ সহযোগিতা হিসাবে এগিয়ে দিচ্ছেন সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার শ্রী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর শিষ্যা শ্রীমতী নমামী কর্মকারের তত্ত্বাবধানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিকাশে দেশে ও বিদেশে "সুরমূর্চ্ছনা"-র উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া সংস্থার কর্ণধার ও ভারত এবং আমেরিকার সদস্যদের ঐকান্তিক চেষ্টায় ও সহযোগিতায় এই দুঃসময়ে ভাল গানবাজনার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দুঃস্থ মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বড় কম কথা নয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...