আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল নাগরিকদের সংরক্ষণ

ভারতে সংবিধান লিখিত হয়েছিল মূলতঃ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। তার মধ্যে একটি দিক যেমন গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা,  ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি অপর দিকটি তেমনি ছিল সমানাধিকারের, বলা ভালো, পিছিয়ে পড়া মানুষদের সামনে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেওয়া। আমাদের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে সর্বাগ্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন ডঃ বি আর আম্বেদকর। যিনি নিজেই ছিলেন একজন প্রান্তিক সমাজের প্রতিনিধি। তাঁর মাধ্যমে ভারতে বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর উন্নতিকল্পে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়। যে কোনো শিক্ষাক্ষেত্রে, সরকারি চাকরিতে ভারতের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য একটি অংশ সংরক্ষণ করার প্রস্তব রাখা হয় এবং তা পরবর্তীতে পাশ হয়। তাই আমরা জানি, সমস্ত রকম সরকারি ক্ষেত্রে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বিশেষ সুযোগ পান।

     আসলে ভারতে এক সময় জাত-পাতের প্রতিকূলতা এতটাই বেশি ছিল, প্রান্তিক শ্রেণীর নাগরিকেরা চাইলেও সমাজের মূলস্রোতে আসতে পারতনা। তাদের কোনকিছুতে অংশগ্রহন করার অধিকার ছিলনা। শিক্ষার অধিকার ছিলনা। তাই তাদের সমাজ অন্ধকারেই থাকত। এই ব্যবস্থাকে পাল্টানোর জন্যি সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, আমরা দেখেছি, এই শ্রেণীর কিছু মানুষেরা সংরক্ষণের সুযোগ নিচ্ছেন। আর্থিক ভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও সংরক্ষণের সুযোগ নিয়ে অন্যদের বঞ্চিত করছেন। পাশাপাশি সমাজের মূলস্রোতের কিছু নাগরিক আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে এবং সংরক্ষণের ছাতা না থাকার কারণে পিছিয়ে পড়ছে। এই রকম দুবিধা দুর করতে এগিয়ে এলো রাজ্য সরকার।

     প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৭জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার ইকনমিক্যালি উইকার সেকশন বা ইডব্লিউএস ভুক্ত মানুষের জন্য চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সংরক্ষনের বিষয় ঘোষণা করেছিল। তবে সরকার ১০৩ সংশোধনী আইন, ২০১৯ এর মধ্যে দিয়ে সংবিধানের ১৫(৬) এবং ১৬(৬) ধারায় সংশোধনী আনে। চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু হয় ইডব্লিউএস দের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া। ভারত সরকারের তরফে এই মর্মে একটি মেমোরেন্ডাম-ও প্রকাশিত হয়। তাতে ২, ৩ ও ৪ নং অনুচ্ছেদে প্রার্থী নির্ধারণের মাপকাঠি, ইডব্লিউএস শংসাপত্র দেওয়ার জন্য আধিকারিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন বৃদ্ধি ও অন্যান্য বিষয়ের উল্লেখ আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সমস্ত রাজ্য সরকারকে এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চালু করার কথা বলা হয়েছিল। ১৭-১৮টি রাজ্য ইতিমধ্যেই তা চালু করে দিয়েছে। সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঘটল আমাদের রাজ্যেরও।

      মঙ্গলবার, অর্থাৎ গতকাল বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। তবে ইতিমধ্যেই যে বা যাঁরা তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছেন, তাঁরা ইডব্লিউএস-এর সুযোগ পাবেননা। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ইডব্লিউএস-এর সুযোগ পেতে গেলে কি কি মাপকাঠি থাকা প্রয়োজন, তা রাজ্য সরকার খুব শীঘ্রই প্রকাশ করে দেবে। তার মধ্যে ঠিক কতটা মাসিক রোজগার, কতটা নিজস্ব জমি থাকলে এই সুযোগ পাওয়া যাবে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই সিদ্ধান্তে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...