সৃজা চক্রবর্তী
পিকনিক গার্ডেন, কলকাতা
আমি সৃজা। পরিবারের সঙ্গে থাকি। বাড়িতে বাবা, মা আর ছোট বোন। এই বছরটা কেমন মিলিয়ে মিশিয়ে কাটল। আমার ক্লাস নাইন চলছে। কিন্তু স্কুল যাব কী, লকডাউন, লকডাউন আর লকডাউন...বুঝতেই পারলাম না ক্লাস নাইনের ক্লাসরুমটা। সারাক্ষণ বাড়িতে, ঘরের মধ্যে। বাইরে যে পা রাখব কোনও চান্স নেই...
২০২১-এর শুরুর দিকটা খুব ভাল কেটেছিল। স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। ভেবছিলেম এবার স্কুল যেতে পারব। সে আর হল না...
আমি আর আমার বোন দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে দাদু-ঠাকুমা-কাকা-কাকিমা-ভাই-বোনের সঙ্গে হইচই করে কটা দিন খুব ভাল কেটেছিল। একটানা ঘরে থাকা থেকে বেরতে পেরেছিলাম। তারপর দেশে কত মজা!কত জায়গায় বেড়াতে গেলাম আমরা একসঙ্গে।
তারপর হঠাৎ করে ভোট শুরু এসে গেল। আবার বাড়ি ফিরতে হল আমাদের। এসে শুনলাম, ‘দিদা আর নেই’... খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার মায়ের শরীর খুব খারাপ গেল। ৪-৫ মাসের লকডাউন। যার জন্য স্কুলটাও বন্ধ হয়ে গেল। কোথাও যেতে পারিনি। বন্ধুরা কেউ নেই। হাসি-গল্প-মেলামেশা সব বন্ধ।
বাড়িতে সারাক্ষণ। চুপ করে বসে থাকতে আর ভাল লাগতো না। মাকে কাজে সাহায্য করতাম তখন। রান্না, ঘরের কাজ, সেলাই এইসব। অনলাইনে ক্লাস চলত আমাদের। আঁকা, গান, কম্পিউটার ক্লাস সব-ই অনলাইনে। এই ভাবে ৫-৬ মাস কেটে গেল। লকডাউন উঠল। পুজো এল...
চারদিকটা একটু সেরে উঠতে আমরা ঠিক করলাম একটা ছোট ট্রিপ করা যেতে পারে। পুজোর ৪-৫ দিনের জন্য পাহাড়ে গেলাম। বরফ দেখলাম, খেললাম বরফ নিয়ে আমার খুব ভালো লাগছিল, মনে হচ্ছিল যেন ওখানেই থেকে যাই।
বাড়ি ফেরার পর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হল। পরীক্ষা শেষ হতেই বড়দিন। ফের ছুটি-ছুটি। নিকো পার্ক ,চিড়িয়াখানা সব ঘুরলাম বাবা-মায়ের সঙ্গে।
সবই হল শুধু স্কুল যাওয়া হল না এই বছর। বন্ধুদের খুব মিস করি। তাদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে পারলাম না। স্কুলের পিকনিক ,স্পোর্টস,ফাংশন কিছুই হল না। আমি চাই ২০২২ সালে যেন এগুলো আর মিস করতে না হয়। স্কুল খুললে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক গল্প হবে ,আড্ডা হবে ,খেলা হবে...