সবচেয়ে বড় শিক্ষক সময়

তন্ময় পান, ডানকুনি

 

ছোটবেলায় পড়তাম শ্রীরামকৃষ্ণ শিশুতীর্থ স্কুলে। শিক্ষকদিবসের দিন বড় দাদা-দিদিরা আমাদের ক্লাস নিতে আসত। একটা অন্যরকম মজা আর সারা বছরের অপেক্ষা থাকত এই দিনটার জন্য। ধীরে ধীরে আমরাও ক্লাস ফাইভে উঠলাম। সে বছর আমরা ছোটদের ক্লাস নেব। সে কী উত্তেজনা! দিদিমণিদের মতো সই করছি খাতায়। একটা অদ্ভুত অনুভূতি! এখনও মনে আছে। তখনও রেডিমেড কার্ড, উপহারের আড়ম্বর শুরু হয়নি। তবে ছিল নির্ভেজাল আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধা।

 

এরপর চলে এলাম গরলগাছা হাইস্কুলে। সেখানে শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হত এই দিনে। ভীষণ উত্তেজনা! যঁদের ভয়ে সারাবছর সিঁটিয়ে থাকা, তা থেকে সেদিন যেন মুক্তি! শেষ বেঞ্চে বসা ছেলেও সমান তালে দৌড়চ্ছে সব থেকে রাগী স্যারের সঙ্গে।

 

তখন বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষার হোম ডেলিভারী চালু হয়নি। শুধু স্কুলে পড়েই অনেকে বছরের পর বছর উতরে যেত। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোনও বিষয়েই কার্পণ্য করতেন না। শাসন-ভালোবাসার কমতি ছিল না।

 

এরপর কলেজ জীবন। তখনও সোশ্যাল মিডিয়া জাঁকিয়া বসেনি। ‘HTD’ লেখা ‘SMS’ ফরোয়ার্ড করা শুরু হয়নি। হাতে আঁকা কার্ড, ভিতরে নিজের হাতে লেখার গন্ধমাখা শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা পৌঁছে দিতাম তাঁদের হাতে।

 

এখনও শিক্ষক দিবসে চেষ্টা করি তাঁদের প্রণাম জানাতে। ‘ছাত্র-শিক্ষক’, ‘গুরু- শিষ্য’ পরম্পরা আমাদের ঐতিহ্য অহংকার এভাবে যতদিন ধরে রাখা যায়! আমার এক শিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন, “সময় সবচেয়ে বড় শিক্ষক”। যত বয়স বাড়ছে বুঝতে পারছি কতখানি দামী ওই কথা...

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...