আমার ছাত্রছাত্রীরা আমার জীবনের অঙ্গ

মৌমিতা কর্মকার, বেহালা

 

ছোটবেলায় যখন ছাত্রী ছিলাম তখন একমাস আগে থেকে ভাবতাম টিচার্স ডে-এর দিনটা কবে আসবে! নানা রকম পরিকল্পনা চলত দিনটা ঘিরে। কখনও বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে, কখনও টিচারকে সারপ্রাইজ দেওয়া, বা কখনও বা সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে স্পেশাল গিফটটা প্রিয় টিচারের জন্য কেনা-এইসব আমাদের চলতই...  

 

কিন্তু, এখন যখন নিজের সঙ্গেই সেই জিনিসগুলো ঘটে, যখন দেখি আমার একদম  ছোট্ট-ছোট্ট স্টুডেন্টরা পড়াশোনা, প্র্যাকটিস-হাজার চাপের মাঝেও নিজেরা ছবি এঁকে, নিজে হাতে উপহার তৈরি করে আমায় গিফট করছে, তখন অদ্ভুত ভালো লাগে। আমি কী ভালোবাসি, কী পছন্দ করি সেই খেয়াল রাখে তারা। উপহারো সেই মতো হয়, এই পাওয়াটা আমার কাছে খুব দামী! আনন্দটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!  

 

সেইসব মুহুর্তে নিজের গুরুর কথা খুব মনে পড়ে। ভরতনাট্যম আমার জগৎ। আমি নৃত্যশিল্পী। এই কথাটা যে আজ বলতে পারছি তা আমার গুরুর-ই জন্য। একটা মানুষের জীবনে শিক্ষাগুরুর স্থান সবচেয়ে ওপরে। তিনিই পথ দেখান। আমি আমার গুরুর থেকে ডান্সের পাশাপাশি জীবনের পথ কীভাবে চলব সেই শিক্ষাও পেয়েছি। আমার গুরু আমায় ভালো শিক্ষার্থী হতে শিখিয়েছেন। তাঁর ভালোবাসা যেমন পেয়েছি, তেমনি শিখেছি চলতে গেলে ডিসিপ্লিন কতটা জরুরী। একাগ্রতা শিখেছি। ধৈর্য্য শিখেছি। আমার স্বপ্ন পূরণের রাস্তা দেখিয়েছেন তিনি।

 

এখন আমি নিজে যখন শিক্ষিকা জীবনে প্রবেশ করেছি, তখন প্রতিদিন মনে হয় আমার ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে পরিবারের মতো। তাদের সঙ্গে আমার শুধু কাজের সম্পর্ক নয়, আমার মনের সম্পর্ক। জীবনের অঙ্গ বলতে পারেন। আমি সবসময় এটাই চেষ্টা করি, আমার ছাত্রছাত্রী আমার মাধ্যম দিয়ে যেন নিজেদের পরিচিতি তৈরি করতে পারে। একজন সত্যিকারের শিক্ষক বা শিক্ষিকা সাধারণ বা অতিসাধারণ ছাত্রছাত্রীকেও অসাধারণ করে তুলতে পারে।

 

শিক্ষিকা হিসেবে আমার সার্থকতা সেদিনই যে দিন আমার ছাত্রছাত্রীরা আমার চেয়ে ভাল শিক্ষক হয়ে উঠবে।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...