রঙ্গীত মিত্র, লেকগার্ডেন্স, কলকাতা
ভেজা কাপড় জড়ানো কলসি আর তার ওপর রাখা খাবারের জায়গা। গরমকালের এই ছিল ছবি। আর ছিল, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট টিভির স্ক্রিনে কার্টুন দেখা-মজার সেই সব দিন।
গরম দুপুরে অ্যাসবেসটসের ছাদের ঘর ছিল, আমার দুপুরের আশ্রয়। জানলা দিয়ে ছুটে যেত ঘামে ভেজা লোকাল ট্রেন। বস্তির ধারে খোলা রেল লাইনে স্নান করত অচেনা কিশোরের দল। প্রেমে ল্যাদ খাওয়া কাকটা আঁচড়ে দিত ছাদের আলসেতে। চিঠির গোপন ভাঁজতে ভাঙা রেডিও বলে উঠত অন্য কারুর জীবন – কথা।
নির্জনতা ছিল। মেলা ছাদে গলে যাওয়া আলকাতরা আর বাইরের গরমের নিঃশ্বাসের পিচে রাস্তায় জমে যাওয়া পায়ের চাঁচ – কোথাও কোনো তাড়া নেই।
ঘুমের জানলাগুলো তখন বন্ধ। বড়দের শাসনহীন স্বাধীনতা । অবাধ। সাইকেলের হাওয়া না থাকা চাকার মতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গতদিনের ফুটবল খেলার পায়ের চোটে আর্নিকা লাগাতাম।
হলুদ বই-এর ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা রবীন্দ্র রচনাবলী আর আমার খাতায় এক গাদা বানান ভুল।
গরমকালে , এভাবেই বিকেলগুলো দূরে সরে সরে যায়। মানে বদলে যায় বড় হয়ে যাওয়ার। মধ্যবিত্ত পাড়ায় বেড়ে ওঠা অন্য নিয়ম।
যদিও তখনও, দেওয়াল থেকে অযত্নে বেড়ে ওঠা বটের আগাছা, পাখিদের খাবার খোঁজার হুড়োহুড়ি আর গল্পের কাল্পনিক চরিত্ররা রূপকথার জগত থেকে বেরিয়ে এসে সাহস ভাগ করে দিয়ে যায়।
স্মৃতি খুঁজে খুঁজে একটা পিঁপড়ে নিয়ে আসে এক গাছা মেঘ। হালকা শীত নিয়ে নৌকা বয়ে যায় আকাশে আকাশে। কখনও-সখনও পাড়াটাকে একটা দেশ বলে মনে হয়। নিয়ম ভাঙার ঝড় আসে। সমর দাদুদের অ্যান্টেনা বেঁকে যায়।
তখনও ফোন আসেনি কারুর বাড়িতে, তখনও কেবিল আসেনি পাড়ায়। কালবৈশাখীর হঠাৎ আসা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অ্যান্টেনা ঠিক করতে করতে, সমর দাদু তুমি কোথায় গেলে ?