সুজয় বন্দোপাধ্যায়, আলিপুর, কলকাতা
গরমকাল মানে ‘গরমের ছুটি’। মানে সকাল বিকেল খেলা। স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজলে আমাদের মজা বলতে ওটাই-‘মাঠ’।
সকাল বিকেল খেলব। ঘরে নয়, মাঠে। তখন মোবাইল কোথায়! ক্রিকেট মাঠটাই আমার হেভেন। জেল গ্রাউন্ডের মাঠটাই আমার লর্ডস, শারজা, ইডেন-গার্ডেন।
শুধু ক্রিকেট নাকি! ফুটবল, কবাডি আর যা যা হয় সব কিছু। আমাদের একটা স্পেশাল খেলা ছিল। নামটা তার খুব অদ্ভুত। আমরা বলতাম ‘লোমড়িগাদি’। মাঠে ঘর কাটা হত। আর দু’ধারে বসে থাকত বন্ধুরা। কোটে ঢুকলেই পথ আটকাত তারা। এই খেলাই তারাই ‘লোমড়ি’। লোমড়ি কাটিয়ে পুরো কোট পার করতে পারলেই আমি ‘উইনার’।
চোখে ভোরের আলো লাগলেই ঘুম চোখে মাঠে। এক মিনিট বেশি টাইম লাগত না। কী যে টান! ভোরের গন্ধ আর ঠাণ্ডা হাওয়া। মনে হত এই হাওয়াটা কিছুতেই মিস হতে দেওয়া যাবে না।
তারপর সারাদিন মাঠ। মাঠই ঘর, মাঠই বাড়ির। বাড়ির লোকও ডাকাডাকি করে বিশেষ হল্লা করত না।
রোদ চড়লে খেলা যেত বদলে। যা-ইচ্ছে তাই। যেমন ইচ্ছে তাই। পড়তাম। ছড়তাম। যতই হাঁটু কাটুক, বোরোলিন লাগাই তবু মাঠ ছাড়তাম না।
এখন ঋতু আসে, ঋতু যায়। আলাদা করে খুব কিছু বুঝতে পারিনা। যে টুকু বোঝা সব কাজের প্রয়োজনে।
কোনও কারণে যদি মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলোর কথা, মনে হয় যেন নাকে টের পাচ্ছি সেই ভোরের গন্ধ। ভর দুপুরের তাতে মধ্যে ঘাসের মধ্যে শুয়ে থাকলে যে গন্ধটা পেতাম। কেউ যেন খুব আস্কারা দিচ্ছে, আদর দিচ্ছে অবাধ স্বাধীনতার।
অনেক দেরী ফেলে এসেছি সেই মাঠ জীবনটা। ফেরার উপায় নেই। তাই মনখারাপও অপচয়।
লোমড়িগাদ্দি খেলাটা হারিয়ে গেছে আমাদের মাঠ থেকে। এখন আর কেউ খেলে না ওসব খেলা। কেউ নামও জানে না... শুধু আমাদের মতো কয়েক জন স্মৃতিতে বাঁচিয়ে রেখেছে... যদিও জানি ‘রি-সেল ভ্যালু’ নেই...