গতবছর থেকে রাতারাতি যেন বদলে গেল ২৫ বৈশাখ!
সবাই দেখি অনলাইনে প্রোগ্রাম করে, এমন কি স্কুল কলেজও!
স্কুল ছাড়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত অনেক জায়গায় নাটক, গান, এসব করেছি, কিন্তু স্কুলের প্রথম ২৫ বৈশাখ পালনটা সবসময় আমার বেস্ট। সেই অনুষ্ঠানের আলাদাই আনন্দ ছিল।
আমি তখন গানবাজনা কিছুই করতে পারতাম না। এখন যা যা পারি সবই স্কুল ছাড়ার পর শুরু। ফলে গান-নাটক দিয়ে স্কুলে আমি খুব একটা বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারিনি, তবে মারকামারা ছিলাম বটে।
নাটক করতাম প্রত্যেক ২৫ বৈশাখে। আমার সে ব্যাপারে ট্র্যাক রেকর্ড খুব ভাল। শুরু থেকে শেষ যত নাটক করেছি সব চরিত্রের খুব মিল।
ভাবছেন তো কী করে হয়!
হয় হয়, ‘নাটক আমি করবই’ এমন ভাব নিয়ে প্রতিবার রিহার্সাল রুমে হাজির হল হয়। সিনিয়র আর নাটকের ডিরেক্টরের কাছে গিয়ে ঘ্যানঘ্যানে করলে হয়।
নাটক করতেও চাইতাম, আবার নাটক করতে ভয়ও পেতাম। অবস্থাখানা ভাবুন!
অন্য কিছু না, স্টেজে উঠে ডায়লগ ভুলে যাওয়ার ভয়! তাই প্রত্যেকবার ২৫শে বৈশাখ যে নাটক হোক না কেন, আমি ঠিক একটা করে এমন চরিত্র খুঁজে বার করতাম যে চরিত্রের মুখে কোনও কথা নেই।
প্রথম বার করেছিলাম ডাক্তারের অ্যাসিসটেন্ট। তার পরেরবার মরার ভূমিকায়। মানে কাটা সৈনিকের অন্য ভার্সান।
তারও পরেরবার ছোট বাচ্চা। শেষবার অবশ্য তিন লাইনের ডায়লগ ছিল।
ডায়লগের চিন্তায় নাটক শুরুর আগে আমি মেকআপ- এর লিপস্টিক চেটে খেয়ে ফেলেছিলাম দু’বার!
নাটক চলাকালীন স্টেজের ওপর মাইকটা দিলাম উল্টে। একজনের দুটো কথা মিস আমার জন্য! তবে শেষ পর্যন্ত উতরে গিয়েছিলাম।
একবার কথা ভুলে যাওয়ায় আপসোস হচ্ছিল বলে দিদিমনি ডেকে আবার নাটকের শেষে আলাদা করে বলে এসেছিলাম।
তবে এখন মনে হয় সেবারটাই আমার সেরা অভিনয়।
মজার ব্যপার কি আমি একটাও কথা বলতাম না নাটকে, কিন্তু এমন হাবভাব করতাম সেটা দেখে সবাই খুব মজা পেত আর হাততালি দিত।
পরে আবার অনেকে বলেছে ভালো হয়েছে নাকি। কে জানে তখন বুঝতাম না। মজা করতাম খুব সবাই। নাটক ছাড়াও আরও অনেক মজা হত আমাদের। যেমন সরস্বতী পুজোর পর যখন আবার কাউকে শাড়ি পরে দেখা যেত বলে কথা, তাই ওই দিনটা কারোও কামাই যেত না।
এখন দিনগুলো খুব মিস করি। আর যত বড় হয়েছে দেখেছি অনুষ্ঠানের মজা কমে গেছে, মজার থেকে বেশি এসেছে ‘ভুল-ঠিক’ কথা, একটু এদিক ওদিক হলে কথা শুনে হয় ভুলভাল করছি নাকি। অথচ ছোটবেলায় এত কিছু ভাবতে হত না। আনন্দ করতাম, মজা করতাম এবং নিজে যেমন যতটা পারি দিয়ে করতাম,একটু আধটু ভুলভ্রান্তি নিজের মতো করে করলে কেউ বলত না বরং ভালবেসে দেখত। আর এখন আমরা বা অন্য কেউ ধেড়ে হয়ে কিছু করলেই লোকজনের গায়ে লাগে! যা হয় বয়সের সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ চলে যায়, ‘রাবীন্দ্রিকতা’ বাড়ে।
ওইরকম ২৫শে বৈশাখ পার পাব না, সত্যিই পাব না।