বসন্তের রক্তাক্ত পলাশ আলিঙ্গন করতে শিখিয়েছে শান্তিনিকেতনকে

অরিন্দম শ্রীমানি, শান্তিনিকেতন

 

বসন্তের রক্তাক্ত পলাশ আলিঙ্গন করতে শিখিয়েছে শান্তিনিকেতনকে। শান্তিনিকেতনের  দোল জীবনকে রাঙিয়ে তোলার উদযাপন। শান্তিনিকেতনের বসন্ত আন্তরিকতা শেখায়, ব্যবহার শেখায় আর এক বুক বিশ্বাসে বন্ধুর হাত ধরতে শেখায়। শেখায়, জড়িয়ে ধরতে ।

ari-1

জুঁই স্মৃতির পাতায় দেখি কবেকার হারানো বসন্ত, উদাত্ত বাউল ফকির দরবেশি সুর। রাত কাটতে না কাটতেই কীর্তনের বিস্তার।  আজানের সুর, এক অন্য সম্প্রীতির বিবরণ।

কলসি, মাটির প্রদীপ, মাটির ঘট, লাল রাস্তা জুড়ে দরজার মাথায় দরজা, ধানের মড়াই, সেচের ডোঙ্গা, গরুর গাড়ির ছই, আর সব কিছুর পরও এক নিশ্চিন্ত জীবন। মোহ মায়া জীবনের এক নির্যাস। বসন্তের আহ্বানে মেলা আর বসন্ত উৎসব এ মেতে থাকত গোটা শান্তিনিকেতন। তবে এখন কিছুটা হলেও শান্তিনিকেতন তার রূপ, রস আর গন্ধ হারিয়ে ফেলেছে।

ari-2

কয়েকদিন আগে থেকেই সেজে উঠত শান্তিনিকেতন। বিভিন্ন পসরা নিয়ে হাজির হত বিকিকিনির মেলা। স্থানীয় শিল্পীদের উপার্জনের উপায়।  সেই পুরানো পোস্ট অফিস এর পাশেই ছিল দুটো বকুল গাছ। তার নিচে বসেই বাজিকাররা মনের আনন্দে বাজি তৈরি করতেন। শান্তিনিকেতন সেজে উঠত। রবীন্দ্রনাথের কল্পনা আর স্বপ্নের বাস্তবায়িত রূপ নিয়ে। শিক্ষা ব্যবস্থার এক অন্য দিগন্ত, শিক্ষা বিস্তারের এক প্রতিকূল নিরীক্ষা, আমাদের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

সেকালের আশ্রমে দোল উৎসবের দিনে খুব ভোরে ছাত্র-ছাত্রীরা জড়ো হত ঘন্টা তলায়। কর্তৃপক্ষের আয়োজনেই হত বসন্ত উৎসব। নিয়ন্ত্রিত কিন্তু সর্বজনের জন্য উন্মুক্ত।

শান্তিনিকেতন এ বসন্ত উৎসবের গ্রামীণ চরিত্র আজ অনেক বদলে গেছে। তার ফল ভালো হয়েছে না মন্দ, এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। তবে এই গ্রামীণ বসন্ত উৎসব আজ এক আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে। যদিও অধুনা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দোল উৎসবকে প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণের ঘেরাটোপে সর্বজনকে সর্বতভাবে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।

ari-3

শান্তিনিকেতনে মেলা, বসন্ত উৎসব আয়তন, কলেবরে বেশ কয়েক বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, মূলত বিপণনের তাগিদে। সে ব্যবসার খাতিরে তাঁদের মুনাফার দিকটাও দেখতে হবে কিন্তু প্রান্তিক শিল্পীকে সুরক্ষিত করে আর শান্তিনিকেতন এর সবুজ বাতাবরণ টিকে বাঁচিয়ে রেখে।

এই বসন্ত, আসন্ন বিভীষিকার একমাত্র প্রতিবাদ। প্রতিরোধের চিত্রকল্প। আমাদের বসন্ত উৎসব সমস্ত বিভাজনের উর্দ্ধে, এক স্বপ্ন সমাজের মুহূর্ত। সে একদিনের জন্য হলেও, সমস্ত একালয়তানকে দূরে সরিয়ে রেখে মানুষের জীবনের উল্লাস এই বসন্ত উৎসব। প্রাণে প্রাণ রেখে, গ্রামীণ জীবনের গর্ভে শহর জীবনকে রেখে এক রঙিন মহোৎসব। তাই এই আবিরে তোমার মুখের সাথে মিশে যাবে আমারো মুখ আর ঠিক সেই সময় রঙিন হয়ে উঠবে, এই সময় আর সমকাল।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...