আমার কাছে ‘বসন্ত’ মানেই শব্দের গন্ধ

শুভায়ন বালা

সোদপুর

 

 

সব ঋতুর নিজস্ব গন্ধ আছে। আমার কাছে প্রথম বসন্ত মানেই শব্দের গন্ধ।  নানান পাখিদের ডাকের শব্দ। আমার বাসার এক চিলতে ঠিকানার সঙ্গে জুড়ে আছে এক-টুকরো সবুজ। ছোট্ট একটা বাগান।

spring sound-1

 

বসন্তকে সঙ্গে নিয়ে দুষ্টু দৈত্যের মত গরম হানা দেয়। আমের মুকুলের গন্ধে ম-ম করে আশ-পাশ। আমার চারপাশে তখন ঝিলমিলিয়ে ওঠে শব্দেরা। পাখিদের ডাক। কত নাম-না-জানা পাখিরা এসে বসে গাছে। নিঝুম দুপুরগুলো পাখির কুজনে ভরে ওঠে। 

সে এক সময় ছিল। কিশোর বয়সে তখনও সময়ের দড়ি-টানাটানি শুরু হয়নি। তাই সবটুকু শব্দ-গন্ধ নিংড়ে নিতাম।

কেরিয়ার, ব্যস্ততার মত শব্দগুলো যবে থেকে আমার জগতে এসেছে, বসন্তের আকর্ষণ যেন আরও বেশি করে ধরা দিয়েছে। প্রতিদিন অফিসের কেবিনে ফাইলের ভিড়ে আমার বসন্তের স্মৃতিরা উঁকি দেয়। পাখিদের ডাক মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়ায়।

spring sound-2

তবে বসন্তের সঙ্গে আমার একটা আড়ি-ভাবের সম্পর্ক আছে। ক্রিকেট। শীতের মিঠে রোদে ক্রিকেট খেলা কেমন যেন ছেলেবেলায় হেঁটে বেড়ানোর মতো মজাদার। বসন্ত আসা মানেই পিছু-পিছু গ্রীষ্মের আগমনের বার্তা। তাই ঘেমে-নেয়ে ক্রিকেট খেলার সময়সীমা কমে আসত বসন্ত এলে।

তখন মনে হতো আড়ি করে দিই ঋতুটার সঙ্গে। কিন্তু পরের দিনই দুপুরে পাখির ডাক শুনে আর আমার বাগানের আমের মুকুলের গন্ধে আবার প্রেমে পড়ে যেতাম বসন্তের।

আজ ব্যস্ততা নামক দৈত্য গ্রাস করেছে জীবনকে। তবুও শীত শেষ হলেই মনের ধুকপুক বেড়ে যায়। সে আসছে। বসন্ত আসছে। ছুটির দিনের দুপুরবেলাগুলো সেই একই পাখির ডাক, আমের মুকুলের গন্ধ কখনো ছেলেবেলাকে হারিয়ে যেতে দেয় না।

spring cri

শুধু বাড়ির পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলার পর আজ আর হাততালিগুলো শোনা যায় না। ওই আনন্দের ডাকগুলো মিস করি।

এভাবেই স্মৃতি , গন্ধ,  উত্তেজনা সব মিলিয়ে আমার দুয়ারে হানা দেয় প্রথম বসন্ত।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...