একটা কাজের অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে স্বপ্নঃ অমিত প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়

জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই আমি ভাবি সমস্যাহীন জীবনটা ঠিক কেমন হয়?

সেদিন যখন দীকপাল রাশিয়ান লেখক এন্তন চেকভের একটি লেখা পড়ছিলাম, লক্ষ্য করলাম উনি সোজাসুজি অকপটে বলেছেন- ‘একবার নিজেদের দিকে তাকান, দেখুন কি বিশ্রী নিরস জীবন আপনারা কাটাচ্ছেন’। 

জীবনে কঠিন সময়ে যে দূর্বিষহ অস্বস্তিকর ফলাফল আমাদের চোখ রাঙায় তা ব্যক্তিস্বার্থে আমাদের অভিযোজিত করে।

অনেকেই আছে আমার মতো প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা দিয়ে সফলতার খুব কাছে গিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না, প্রতিবার ভাবছে This time i will leave no stone unturned, ঘরে বয়স্ক অভিভাবকরা মুখ চেয়ে বসে আছেন, একটা কাজের অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে স্বপ্ন, তাদের জীবনে ঝড় এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং যুগে পশ্চিমীঝঞ্ঝার মতো বা কালবৈশাখীর মতো অনিয়মিত নয়, বরং রোজ যুদ্ধে জিতে হাল না ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হচ্ছে, অবশ্যই নিজেকে।

কেউ বলছে ব্যাক-আপের কথা ভাবিসনি কেন, কেউ ভাবছে সবার দ্বারা সব হয় না। এসবের থেকেও বড় হয়ে যায় বয়স, যখন শক্তি একাগ্রতা নিয়ে নতুন রক্ত প্রতিভা আর সম্ভবনা নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে সেখানে অসফলতা থেকে আবার তারুণ্য পেরিয়ে সমশক্তি দিয়ে প্রতিবার মরণ কামড় দিতে দিতে হয়তো ধারালো দাঁতটাও ব্যথা হয় বড়।

সদ্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কিছু দুর্যোগের আভাস পাওয়া সম্ভব হয়নি। একটা সময়ে হয়ে যাবে ভেবে সময়ের Potentiality কে বোঝা সম্ভব না এবং সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে যায়। বাড়িতে admit card এর বোঝাই পাহাড় অভিজ্ঞতা আর ভুল পথের পথিক দুটোর পরিচয়ই দিত। সমীকরণ কখনও জীবনের অঙ্কে সহজ ভাবে মেলে না বলে জীবনের সব নিয়ম ব্যক্তিগত এবং নির্দিষ্ট।

প্রথমত যে ঔষধে সামনের ছেলেটি অব্যর্থ ফল পেয়েছে হতে পারে আমি সেই জিনিস হজমই করতে পারলাম না। সাগরে মিশতে গেলে নদীর মতো পথ করে নিতে জানতে হবে। ভেবে দেখেছি একলব্য দ্রোণাচার্যকে গুরুদক্ষিণা না দিলে শ্রেষ্ঠের লড়াইয়ে থাতো কিনা নাকি নিজের প্রতিভার দম্ভে মুখ থুবড়ে পড়ত।

সত্যি বলতে ওই প্রিলি থেকে মেইন্স আর তারপর ডাকে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া এই সব কিছুই মানুষকে কঠিন আর আনন্দের দিনের সাক্ষী রাখে। পিছনে পড়ে যায় অনেক অনেক অভ্যাস, বন্ধু, শখ। কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে " যুদ্ধ করো পার্থ!"। 

তবে প্রতিটা ঝড় থামে। থামতেই হয়। কখনও কখনও সেই ঝড়ের সাক্ষী থেকে রোদ ঝলমলে দিনে মনে পড়ে এই ঝড়গুলো বুঝিয়েছে শিকড় কতটা গভীরে থাকলে একটা গাছ এভাবে মাথা উঁচিয়ে থাকতে পারে। এই বিলম্বিত সময়ে বেশ ডালপালা ভেঙেছে, বহু নীড় কোথায় উড়ে গেছে। তবু নতুন সকাল বর্ষা এনেছে আবার কিছু পাতা গজাবে, আশ্রয় দেবে এই মহীরুহ।

Introduction about writer: বর্তমানে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত মছলন্দপুরবাসী অমিত প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...