প্রান্তিক নন্দী
বারিজাহাট্টা, চণ্ডীতলা
ইংরেজি নবর্ষের মজা আমরা করি বিলিতি কায়দায়, কিন্তু পয়লা বৈশাখ মানে ভরপুর বাঙালিয়ানা। সেই জোয়ার ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছেলেবেলার সেই চেনা নস্টালজিয়াতে।
ছোটবেলা থেকে এই দিনটা কত আনন্দের! বিশেষ করে আমার মতো এই বাংলার গ্রামে গঞ্জে কিংবা আধা শহরে বেড়ে ওঠা ছেলে মেয়েদের কাছে। আমার কাছে তো এই দিনটা ছোট থেকেই খুব স্পেশ্যাল!
আজও মনে পড়ে প্রতি বছর নববর্ষ এলে সকালে উঠে প্রথম কাজ ছিল বাবা-মা কে প্রণাম করা। মা পিসি-ঠাকুমা-দিদা-জেঠিমা-মাসি-মেসো প্রত্যেককে টেলিফোন করত। বছর শুরুর প্রণাম জানাতে। আমিও মায়ের পা-এ পা-এ ঘুরতাম, তখন মা হাতে ফোনের রিসিভারটা ধরিয়ে বলত, ‘পয়লা বৈশাখের প্রণাম জানাও’...
আমিও অমনি টপ করে সকলকে নববর্ষের প্রণাম জানিয়ে দিতাম। এরপর ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে পরতাম ব্যাট-বল হাতে। পাড়ার বন্ধু বান্ধবীদের হাঁক দিতে দিতে যেতাম। খেলতে আসার জন্য।
তাদের বাড়ি থেকেও পালটা হাঁক আসত ‘বাড়িতে আসার’। মা শিখিয়েছিল ছোট থেকে নববর্ষের দিন সকলের বাড়ি গিয়ে প্রণাম করে আসতে; আমি অবশ্যই সেটা করতাম, ভালো মন্ডা-মিঠাই- সরবত পাওয়ার আশায়।
প্রত্যেকের বাড়ি ঘোরা সেরে সব বন্ধুরা এসে মাঠে খেলতাম। তারপর মাঠের পাশের বাড়ির জেঠিমা ডেকে ডেকে প্রত্যেককে জল বাতাসা দিতেন। এটাও নববর্ষ স্পেশ্যাল। আমরা সব ফেলে দৌড় দিতাম কে কটা বেশি বাতাসা তুলতে পারে সেই প্রতিযোগিতায়।
মাঠ থেকে ফিরে দেখতাম বাড়িতে চন্ডীপাঠ হচ্ছে; আমি খেলে এসে সেখানে এলে মা ইশারা করে বলত স্নান সেরে পূজোর ওখানে আসার জন্য। আমিও স্নান শেষ করে বিছানার ওপর রাখা নববর্ষের নতুন পোশাক পরে লাফাতে লাফাতে সেখানে যেতাম।
আমার বন্ধুরাও সেখানে এসে জুটত কারণ সেইদিন আমার বাড়িতেই তারা নিমন্ত্রিত; মা প্রতিবছর আগের দিন তাদের বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ জানিয়ে আসত। আমিও যেতাম মায়ের সঙ্গে সঙ্গে। দুপুরের ভোজ শেষ হলে ক্যারাম বেরত।
বিকেলে রোদ পড়লে সেজেগুযে মায়ের সঙ্গে দোকান ‘টহল’। আমাদের যে দোকান গুলোতে নিমন্ত্রণ থাকত প্রত্যেকের দোকানে যেতাম। এরপর মিষ্টি , ক্যালেন্ডার সংগ্রহ তো আছেই।
নববর্ষের ছবিটা পাল্টে গিয়েছে বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, পাল্টেছে সেই আগের উদ্যম, দোকানে দোকানে ঘোরা, মায়ের সঙ্গে নতুন খাতা করতে যাওয়ার আনন্দগুলো। এখন নববর্ষ কাটে বন্ধুদের বাড়ি। তবুও নববর্ষ এলেই মনে করিয়ে দেয় পুরনো দিনগুলোর কথা। সেই টানেই কাটবে এ বছরও...