তুষ্টি ভট্টাচার্য, কলকাতা
শীত মানেই মরশুমি ফুল, পাহাড়ের বরফ দেখতে যাওয়া বাঙালি আর অনন্ত খাওয়াদাওয়া। আমিষ খাবারের প্রবণতা বাড়ে এসময়। কিন্তু তাই বলে কী আর নলেন গুড়ের কথা ভুলে যাবে বাঙালি! আর নলেন গুড় মানেই পিঠে-পায়েস। আমার কাছে অবশ্য পিঠে মানেই পাটিসাপটা। সে নারকোলের পুর হোক বা ক্ষীর। পুর বানানো কী যে সে কথা!
এই পুরই হল পাটিসাপটার প্রাণভোমরা। নারকোল কোরা নলেন গুড়ের সঙ্গে ঢিমে আঁচে পাক হবে, যেন কড়াপাক না হয়ে যায়, সন্ত্রস্ত থাকবে রাঁধুনি। আর ক্ষীর দুধে ভিজিয়ে রেখে নরম করে গুড়ের সঙ্গে ফিসফিস কথা বলবে যখন, তখনই জানবে তোমার কবিতা লেখার সময় হয়ে এসেছে।
অনেক ভেবে দেখেছি, সত্যি বলতে কী, পাটিসাপটার চেয়ে বড় কবিতা আর হয় না! ধীরে ধীরে ধবধবে চালের গুঁড়োয় সাদা দুধের মিশে যাওয়া দেখতে দেখতে হাল্কা লালচে রঙ নিয়ে এল পাটালি। সাদা আর লালে মিশে এক অনির্বচনীয় রঙ, যাকে তুমি দুধে আলতাও বলতে পারবে না, বলতে পারবে না অন্য বিদেশী নামও। এরপরে উত্তপ্ত প্যানে সেই মিশ্রণের বুড়বুড়ি কাটা দেখে যদি তোমার নরকের লৌহ কটাহে নিজেকে ফুটতে দেখার কথা মনে আসে, তাহলে সত্যিই তুমি মহাপাতক। আসলে এ এক নির্মাণ। নির্বাণও বলতে পার। কেননা শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছ তুমি। এবার এক চিলতে বা অনেকটা, কতটা মিষ্টি পুর দেবে সেই কবিতায়, তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বলে দেবে। হাল্কা হাতে গড়িয়ে দাও কালের চাকা। তুমিই তো স্রষ্টা! পাটিসাপটার ঠাণ্ডা হওয়া জরুরি। ঠিক যেমন একটি কবিতা লিখে ফেলে রেখে দিতে হয়। তারপর পূর্ণতা। এই তো কবিতা!
তবে এই কবিতার মর্ম বুঝতে চাই বোদ্ধা ও দীক্ষিত পাঠক। নেহাত আনাড়ির হাত ফস্কে কোনওমতে মুখে চলে যাওয়া--এ কবিতা তেমন নয়। কালজয়ী এই কবিতাকে দোকান থেকে কিনে এনে যারা ভাবে, এই তো বিকোচ্ছে সে সামান্য মূল্যে--তারা বরং ময়দা ভেজে খাক!