শুভ্রা সেন
রাঁচি, ঝাড়খন্ড
তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়,
পাতা কাঁপা থেমে যায়,
ফেরে তার মনটি
যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার
ভালো লাগে আরবার
পৃথিবীর কোণটি।
ছোটবেলায় ‘শিশু ভোলানাথ’-এর ‘তাল’ গাছ কবিতাটা যতবার পড়তাম ততবার এই শেষ প্যারাগ্রাফে এসে খুব মন খারাপ করত। কেন যে মনখারাপ বুঝতে পারতাম না, কিন্তু মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে হত। সেই মুহূর্তে দেখতে ইচ্ছে হত। যেখানেই থাক...
আজও ইচ্ছে করে। কিন্তু উপায় নেই...এতটা দূর অতিক্রম করা যায় না।
নিজের শহর থেকে অনেকটা দূরে আমি থাকি। আমার শহর কলকাতায় একা থাকে আমাদের বাড়িটা। বাড়ির ছাদ। ছাদের গাছগুলো। ছাদের ওপর আমার পড়ার ঘরটা। কত কত টান। আজ কেউ নেই। শুধু খালি বাড়িতে একলা ঘুরে বেড়ায় আমাদের স্মৃতিগুলো।
মায়ের কোনও ফটোগ্রাফ আমার কাছে থাকে না। ইচ্ছে করেই রাখি না। ভয় পাই। এই প্রবাস জীবন যদি আরও কঠিন হয়ে যায়! আমার তো আর ইচ্ছে করলেই মাকে ছোঁয়ার উপায় নেই। তাই এভাবেই মানিয়ে নেওয়া। মায়ের সব ছবি রাখা আছে বাড়িতে। বাড়ি ফিরলে তারাই আমার সঙ্গী। আমার কিশোরী বসন্তেই তাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি। তবু জানি সে আছে। আমার সঙ্গে সঙ্গে আছে। এই শরীরে। এই মনের ভিতর অনন্ত হয়ে…
মা আমার ঘরে ফেরার টান। চোখ বুজলেই তাকে ছুঁতে পারি হাওয়ায় হাওয়ায়। আমার চোখের জলে জোয়ার লাগে। সেই কবে তীর ছেড়ে গেছে তার তরী। আমি আজও দাঁড়িয়ে আছি সাত সমুদ্র পারে, অপেক্ষাতে...
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে
হঠাৎ অকারণে
একটা কী সুর গুনগুনিয়ে
কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন
আমার খেলার মাঝে।