কখন যেন মা আমার মেয়ে হয়ে গিয়েছে!

সাথী কুণ্ডু, বিটি কলেজ, মধ্যমগ্রাম

 

 

আমি তোমার ছায়ায় বাঁচি মা,

আমি তোমার চোখের তারায় বাঁচি মা।

 

মা – ছোট্ট একটি শব্দ হলেও কি বিশাল তার পরিধি!

সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটার মধ্যে শুধু মমতার ছোঁয়াই নেই রয়েছে ক্ষমতারও সর্বোচ্চ শক্তি৷ 

মার অনুগ্রহ ছাড়া এই ভুবনে কোনও প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়৷ কারণ তিনি যে আমাদের গর্ভধারিনী, জননী এই কথায়৷ প্রতিটি সন্তানের কাছেই মা একজন তুলনাহীনা অনন্য নারী। তাদের প্রত্যেক দিনের লড়াই, আপসগুলো , পদক্ষেপ গুলো সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান শিক্ষা দিয়ে থাকে।

মা তো মা-ই হয়। কোনও কিছুরও সঙ্গেই তার তুলনা হয়না তবে শ্রদ্ধা এবং সন্মান জানাতে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস।

মা মানে নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, বেচেঁ থাকার অস্তিত্ব, নিরাপদ আশ্রয়, অন্ধকারে একবুক ভালোবাসা, স্নেহের অফুরান ভান্ডার। মা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়, আপনজন। প্রত্যেকের কাছেই তার মায়েরা প্রিয় মানুষ হয়ে থাকে। আমার কাছেও বটে। মায়ের কথা বলতেই সব থেকে বেশি যেটা বলতে ইচ্ছে করে- মায়ের শাসনটা। ছোটবেলায়  প্রচুর মার খেতাম দুষ্টুমির জন্য। তখন অবশ্য রেগে চণ্ডাল হয়ে যেতাম তবে এখন প্রতিটা পদে বুঝি সেই শাসনগুলো কতটা জরুরি ছিল নয় তো আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার সম্পর্কে লিখতে পারছি, তার কষ্টের দাম দিতে পারছি সেটা হয়তো পারতাম না। তার অগাধ পরিশ্রমেরই ফল এটি। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সেটা না বললেই নয়। সআমার মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন খুব অদ্ভুত ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। টানা পরীক্ষা চলাকালীন মা দিনরাত এক করে খেয়াল রাখত। রাতে ঘুমোতে পারেনি অনেক দিন। আমার পরীক্ষা যখন শেষ হল তখনও মায়ের মুখে কোনও ক্লান্তির ছাপ দেখতে পাইনি। সেদিন রীতিমতো কেঁদে ফেলেছিলাম!

এরপর যত বড় হয়েছি, দিন এগিয়েছে মায়ের সঙ্গে প্রচুর মতের বিরোধও হয়েছে। পরাগারাগিও যেমন হত তেমনি খুব তাড়াতড়ি ভাবও হয়ে যেত।

আমার মা প্রচন্ড বাইরে ঘুরতে আর খেতে ভালোবাসে, মায়ের একটাই বায়না থাকে বা আবদার বললেই চলে, প্রত্যেক সপ্তাহান্তে তার সাথে কাছে-ধারে কোথাও গিয়ে খাওয়া দাওয়া করা, সময় কাটানো, তার এটুকু ইচ্ছে রাখতে পারবো না সেটা তো হয় না, তাই প্রত্যেক সময় না হলেও মাঝের মধ্যে যেতেই হয়। মা খুব তাড়াতাড়ি রেগে যায়, আবার ঠাণ্ডাও হয় খুব তাড়াতাড়ি।  অনেক সময় একটু খুনসুটি করলে বা রাগিয়ে দিলে যখনই মা চটে যায়, তখন মাকে আমি শান্ত করি পান দিয়ে। মায়ের খুব পছন্দ! পান মায়ের সব সময় প্রিয় তাই দিলেই ঝটপট কুল-কাম।

আমার সব থেকে প্রিয় মায়ের খেয়াল রাখার টানটা। কখন খাচ্ছি, কী খাচ্ছি, কখন বাড়ি ফিরব- এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে কত আদর থাকে!

একটা সময়ের পরে মা বাবারাও বৃদ্ধ হন, তাঁদের খেয়াল রাখার কাজ তখন সন্তানদের।  এই দায়িত্ব কারুর আগে আসে, কারুর পরে। আমি এখন থেকেই সেই দায়িত্ব পালন করে থাকি। মায়ের হাই ব্লাডপ্রেশার, তাই ওষুধ খাওয়ার সময় মনে রাখা,  ঠিক সময়ে ওষুধ মজুত রাখা,  দুশ্চিন্তা যাতে না করে সে খেয়াল রাখা- এভাবেই বদলে গিয়েছি আমরা। কখন যেন মা আমার মেয়ে হয়ে গিয়েছে!

এটুকুই ছিল আমার মায়ের কথা। তবে দিনটা আজ সব মায়েদের। দুনিয়ার প্রতিটি মা সন্তানদের জন্য প্রতিদিন যেভাবে লড়াই করে চলেছে তাঁদের সব্বাইকে আমার সালাম, সঙ্গে আমার মাকেও...  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...