বৃষ্টির পর আশ্চর্য একটা ডাক শুনতে পাই

নীপবীথি ‌ভৌমিক, শান্তিনিকেতন 


কি জানি এমন কেন মনে হচ্ছে, সব কেমন যেন চলে যাচ্ছে দূর থেকে আরো দূরে, বহুদূরে। যে দূরের সীমানা কোনো দৈর্ঘ্য প্রস্থ দিয়েও মাপা যাবে না। অথচ আকাশ তো ঝরঝরে নীল রঙের জামা গায়ে দিয়ে বসে আছে । নীল রং ও তো গভীরতার রং।

মন জুড়ে হৃদয় থেকে উৎসারিত ভালোবাসার রং। সন্ধ্যে বেলায়ও তো মাধবীলতা এসে সেজেগুজে বারান্দার গা ঘেঁসে বসে আছে। বেশ হাসিখুশিই আছে তো সে। আর তার সুরভী মেখে ঘরময় লোকজনও বেশ খুশি।

তবে আমি কি খুশি নই, প্রিয় নীল আর মাধবীর হাসিতে? তেমন তো কিছুই হয়নি আজ! তবে?

rain-n-1

আসলে অপেক্ষা একটা দীর্ঘ অসুখের নাম। আর এই উপশমহীন অসুখে ডুবে মরতে ভালো যে এক্কেবারেই কারোর লাগে না একথা বলাটাই বড়ো মিথ্যে। এই অপেক্ষাতেই জন্ম নেয় হারিয়ে যাওয়া কোনো ভালবাসা, হারিয়ে যাওয়া কোনো নদীর আবার স্রোতে ভেসে যাওয়া।

কত শত নতুন পথ, নতুন রং তৈরি হয় মনের ভিতর। যাকে ছুঁতে গিয়েও ছুঁতে পারছি না । বারবার আবার হারিয়ে ফেলেছি। আবার সেই অপেক্ষা ফিরে পাওয়ার।

হাতে হালকা করে তৈরী চায়ের কাপ, দীর্ঘ বিরতির পর ফিরে আসা কলমের জলছাপ আর বাইরে ঝমঝম করে নামা বৃষ্টি। অবশ্য এখন আর নেই সে। বেশ কয়েক ঘন্টা রাজত্ব করে এখন তিনি আপাতত নেই। হাওয়া দিচ্ছে হাল্কা বাতাসে ভর করে।

এই বৃষ্টির পর আশ্চর্য একটা ডাক শুনতে পাই আমি। তবে কেন তার সদুত্তর নেই আমার কাছে। জানি সেগুলো আসলে ব্যাঙের ডাক, ঝিঁ ঝিঁ ডাক আর শিকার ধরতে আসা রাত পেঁচার ডাক। তবুও এই রাত পেঁচার ডাকের ভিতর যে কি আছে আমি আজও বুঝিনি।

 

rain-n-2

 

কোথাও যেন আমার মনে হয় সেও কিছু লুকিয়ে রাখা দীর্ঘ অপেক্ষা নিয়ে বসে আছে। অপেক্ষার নামহীন অসুখে সেও জর্জরিত। নিজেকে ভীষণ খুঁজে পাই এই বৃষ্টি পরবর্তী রাত পেঁচার তীব্র স্বরের মধ্যে। ভেসে আসে শৈশবের বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় হাঁটু জল কাটিয়ে বন্ধুদের সাথে রেনি ডে হয়ে যাওয়া ইস্কুল ফেরত দিনগুলো।

 

আসলে দীর্ঘ খরার পর কিছু অকাল শ্রাবণের স্বপ্ন আমাদের সবার ভিতরেই থাকে। আর সেই স্বপ্নে ডুবতে ডুবতে কখন যে সন্ধ্যে থেকে রাত- ভোর হয়ে যায়, " রাত ভোর বৃষ্টি" ই হয়ত একমাত্র জানে। আমাদের সব কিছু জানতে হয়? বরং অপেক্ষায় থাকতে হয় অসুখের সুগন্ধি মেখে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...